অপবিত্র অবস্থায় শিশুকে দুধ পান করানো যাবে?

মায়ের বুকের দুধ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। জন্মের পর শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধই সব থেকে উপযুক্ত খাবার। ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাতক শিশুর জন্মগত অধিকার। যাতে কোনো কারণে এটি খর্ব না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এজন্য ধর্মীয় ফরজ বিধান রোজা পালনেও শিথিলতা আরোপ করে বলেছেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ -(সুনানে আবু দাউদ)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার। ’ –(সুনানে তিরমিজি)

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বিধান ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ ( সূরা লোকমান, আয়াত, ১৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে।’ -(সুরা বাকারা, আয়াত, ২৩৩)

শিশুকে দুধ পান করানোর সময় যদি কোনো কারণে মায়ের শরীর অপবিত্র থাকে তাহলে তা শিশুর দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো সমস্যা নেই। হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : «أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَقِيَهُ فِي بَعْضِ طَرِيقِ الْمَدِينَةِ وَهُوَ جُنُبٌ، فَانْخَنَسْتُ مِنْهُ، فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟. قَالَ: كُنْتُ جُنُبًا فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ وَأَنَا عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ. فَقَالَ: سُبْحَانَ اللهِ، إِنَّ الْمُسْلِمَ لَا يَنْجُسُ

সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার সঙ্গে মদীনার কোনো এক পথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখা হলো। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন নাপাক অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে অপবিত্র মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাত হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ওহে আবু হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি অপবিত্র অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুমিন কখনো এমন অপবিত্র হয় না যে, তাকে স্পর্শ করা যাবে না। (তিরমিজি,১২১.সহিহ বুখারি, হাদিস, ২৮৩)

তবে শরীর কখনো কোনো কারণে অপবিত্র হলে একজন মুসলমানের উচিত যতদ্রুত সম্ভব শরীর পবিত্র করে নেওয়া। অপবিত্র অবস্থায় বেশিক্ষণ সময় না কাটানো।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!