আগামীকাল হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে। তবে ঘোষিত এ কমিটি হবে আংশিক। পরবর্তীতে এতে আরো সংযোজন হবে। বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের পদে আছেন এমন কাউকে খসড়া কমিটিতে রাখা হয়নি বলে জানা গেছে। কমিটি ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম।
আগামীকাল (৭ জুন) সোমবার সকাল ১১ টায় রাজধানীর জামিয়া আরাবিয়া খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মিলনায়তনে এই কমিটি ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন হেফজাতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব পুত্র মাওলানা রাশেদ বিন নূর।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল এক জরুরি ভিডিও বার্তায় হেফাজতের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে হেফাজতের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শে এ কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। ইনশাআল্লাহ আবার আহ্ববায়ক কমিটির মাধ্যমে হেফাজতের কার্যক্রম চালানো হবে। এরপর সেদিনই রাত ১২ টায় হেফাজতের আহ্ববায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রধান আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, সদস্য সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, সদস্য মাওলানা সালাহুদ্দীন নানুপুরী ও দেওনার পীর অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান চৌধুরী।
কমিটিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান আহ্বায়ক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর ও সদস্য সচিব মাওলানা নূরুল ইসলামকে মহাসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির বর্তমান পরিধি ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। যেখানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর প্রয়াত আমীর শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মো. ইউসুফ মাদানীকেও রাখা হচ্ছে।
কমিটিতে খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আব্দুল হক মোমেনশাহী, হাটহাজরী জামিয়ার পরিচালনা পরিষদের সদস্য মাওলানা ইয়াহইয়া, জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরের মুহতামিম মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ.-এর মুহতামিম মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্ঠা মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব বরিশাল, মাওলানা তাজুল ইসলাম, হাটহাজারী জামিয়ার শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ আইয়ুব বাবুনগরীকে কয়েকজনকে নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হয়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন, জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া বি-বাড়িয়ার মুহতামিম মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), নারায়নগঞ্জ ডিআইটি জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আবদুল আউয়াল ও ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরার মুহতামিম মুফতি আরশাদ রহমানী, মাওলানা লোকমান হাকিম (চট্টগ্রাম) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের সহ সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর)।
সহকারী মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন, মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া, চট্টগ্রাম), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (সাহেবজাদা আল্লামা আহমদ শফী)। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে, মাওলানা মীর ইদরিস (চট্টগ্রাম), সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আছেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাসউদুল করীম (টংগী গাজীপুর), মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী (কুমিল্লা)। অর্থসম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে, মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল)। আর সহ-অর্থসম্পাদক হিসেবে আছেন, মাওলানা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট) প্রমুখ।
কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক (গ্রেফতার), যুগ্ম মহাসচিব ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী (গ্রেফতার), প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী (গ্রেফতার), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী (গ্রেফতার), মাওলানা হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া হেফাজতের নেতারা।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুইনুদ্দীন রুহিসহ শফী অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ৩০ হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।