আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশিকঠোর শাস্তির রয়েছে

রাজধানীর মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেছেন, জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা আরবি সফর মাসকে দুঃখের মাস মনে করতো। অথচ ইসলামে সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এর উপর দৃঢ. বিশ্বাস থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। এছাড়া আজ ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। আজ (১০ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে প্রতি দুই মিনিটে তিনজন অর্থাৎ ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সংখ্যাটি উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-এ কোভিড মহামারি শুরুর ১০ মাসে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১১ হাজারের বেশি মানুষ। নাউযুবিল্লাহ। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ আত্মহত্যা প্রতিরোধে আধুনিক বিশ্বের গ্রহণ করা কোনো কর্মপন্থাই ফলপ্রুসূ হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, ইসলাম নির্দেশিত কর্মপন্থা ও ধর্মীয় অনুশাসন না মানা। ইসলাম আত্মহত্যাকে মহাপাপ এবং ঘৃণ্য কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। যারা জেদ কিংবা পার্থিব জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বাঁচতে আত্মহননের মতো ভয়াবহ পথে পা বাড়ায়, তারা যদি বুঝতো এর ভয়াবহ শাস্তির কথা তাহলে কোনোভাবেই এই পথে পা দিত না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মহত্যাকারীর পরকালীন কঠোর আযাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী ও সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে খুব শিগগিরই অগ্নিতে দগ্ধ করবো। এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)।

তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসেও কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ রা. রাসুলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আহত হয়ে (ধৈর্য না ধরে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারী)। রাসুল সা. অন্যত্র বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যেই জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে, সে দোজখেও সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ (নাসাঈ)। অন্য আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. আত্মহত্যাকারীর প্রতি প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে তার জানাযার নামায পর্যন্ত পড়েননি। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা এবং সবরের আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করেন, আমীন।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!