ইসলামে কোন কুসংস্কারের স্থান নেই

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজেিদর পেশ ইমাম মুফতি মুহাম্মদ মুহিবুবল্লাহিল বাকী নদভী বলেছেন, ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এতে কোন কুসংস্কারের স্থান নেই। ইসালাম পূর্বযুগে আরবে সফর মাসকে নিয়ে এক ধরণের কুসংস্কার ছিল। এই কুসংস্কার থেকে পবিত্র করার জন্য রাসুলে পাক সা. ইরশাদ করেছেন, ইসলামে কোন স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণ নেই। নেই কোন অশুভ লক্ষণ, এমন কি পেঁচার মধ্যেও কোন অশুভ লুকায়িত নেই। সফর মাসেও কোন সফর অর্থাৎ পেটের কীট তথা অশুভ লক্ষণ নেই। যেহেতু সফর মাস ও অন্য মাসের মত একটি মাস। এ ধরণের কুসংস্কার ভিন্ন প্রকৃতিতে আমাদের সমাজে ও প্রচলিত আছে। যেমন আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, সকালে ঘরের থেকে বের হওয়ার সময় চোখের সামনে ঝাঁড়ু দেখা গেলে মনে করা হয় যে, আজকের যাত্রা অশুভ হবে। আজ (১০ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
পেশ ইমাম বলেন, মুহররম মাসের আগমণ হলে মনে করা হয় এ মাস শোকের মাস, এ মাসে খুশীর কাজ তথা বিবাহ শাদী শুভ হবে না। যমজ কলা খেলে মনে করা হয় যমজ সন্তান হবে। কোন মেয়ের দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা থাকলে মনে করা হয় এ মেয়ের স্বামী মারা যাবে। রাসুলে পাক সা. এ সমস্ত কুসংস্কার পূর্ণ আক্বীদা বিশ্বাস থেকে মানুষকে পবিত্র করার জন্য বললেন, ইসলামে কোন অশুভ লক্ষণ নেই। এমনকি সফর মাসেও। সফর মাসে অশুভ কিছু যদি থাকত তাহলে এ মাসে ইসলামের এত বরকত ময়ী স্মরণীয় ঘটনা ঘটত না। রাসুলে পাক সা. এর শাদী মোবারক হযরত খাদীজা রা.-এর সাথে এ মাসেই হয়। আত্মরক্ষার জন্য আবওয়া নামক ইসলামের প্রথম অভিযান এ মাসেই হয়। খায়বারের বিজয় এমাসেই হয়। হযরত খালিদ রা. এবং হযরত আমর ইবনুল আস এ মাসেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, অতএব দিন, কাল, ক্ষণ, বস্তুু কোন কিছুর মধ্যেই অশুভ লক্ষণ আছে বলে বিশ্বাস করাটাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করার জন্য ইসলাম শুভ লক্ষণ গ্রহণ করাকে অনুমোদন করে। কেননা কুসংস্কার এক ধরণের মিথ্যা বিশ্বাস, আর মিথ্যা অর্থ হল অবাস্তবতা, ভারসাম্যহীনতা, যা বিশ্বাসের ভারসাম্যতাকে নষ্ট করে। অন্যদিকে ইসালাম হল একটি ভারসাম্য পূর্ণ ধর্ম। ইসলাম অভাবী হওয়াকে নিরুৎসাহিত করে যা মানুষকে লাঞ্চনার মধ্যে ফলে দেয় কতেক সময়। অন্যদিকে ইসলাম অতি ধনী হওয়ার লোভকে নিরুৎসাহিত করে যেহেতু অতি ধনী হওয়া কতেক সময় মানুষকে অহংকারী বানিয়ে ফেলে। ইসলাম মানুষকে বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ দেয় তবে কাপুরুষ হতে নিষেধ করে।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম মানুষকে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে নির্দেশ দেয়। তবে ব্যক্তিত্ব দেখাতে গিয়ে অহংকারী ও জালিম হতে নিষেধ করে। ইসলাম মানুষকে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য সীমালঙ্ঘনকরীকে প্রতিহত করতে নির্দেশ দেয়। তবে সন্ত্রাসী হতে নিষেধ করে। ইসলাম নারী পুরুষের স্বাধীনতাকে অনুমোদন করে। তবে স্বাধীনতার নামে চরিত্রহীনতাকে অনুমোদন করে না। চরিত্র গঠনে সহায়ক এমন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে ইসলাম অনুমোদন করে। তবে চরিত্র নষ্ট করে এমন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম তাওহীদ, রিসালাত , আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার নির্দেশ দেয় অন্যদিকে কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাসী হতে নিষেধ করে। ইসালাম আল্লাহ তায়ালার প্রতি আশাবাদী হয়ে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করার নির্দেশ দেয়। তবে আশাবাদী হয়ে কর্মত্যাগী হতে নিষেধ করে। মোদ্দা কথা হল লেন-দেন, ব্যবসা বাণিজ্য পারিবারিক সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, কূটনৈতিক সব বিষয়ে ইসলামের ভারসাম্য পূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।