ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং কবি জসিম উদ্দিন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ করা, গাছ লাগানো নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত-অনেক সাওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে পরিবেশের নানা উপাদান ও এর উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বৃক্ষ ও পাহাড় সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, আমি ভূমিকে করেছি বিস্তৃত ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি উৎপাদন করেছি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা কাফ, আয়াত নং-৭-৮)। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা ও পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে কোরআন-হাদীসে নানা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আজ (৪ জুন) শুুক্রবার ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের জুমার বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
খতিব বলেন, পরিবেশের সবকিছুই মহান আল্লাহ মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাকার, আয়াত নং-২৯) অক্সিজেন, পানি, খাদ্য ইত্যাদি ব্যতীত মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, এর প্রতিটিই পরিবেশের অংশ। পরিবেশের প্রতিটি উপাদানই মানুষের বেঁচে থাকার এবং জীবনযাপনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। যে কারণে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণে যত্নবান হওয়া। আমরা প্রতিনিয়তই পরিবশ দূষণ করে চলেছি। পরিবেশ দূষণ রোধে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ৫ জুন আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হবে।
তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট, প্রাণঘাতি ক্যান্সারসহ নানা রোগ সৃষ্টির বায়ু দূষণ। বায়ুকে দূষণমুক্ত করাসহ পরিবেশ সংরক্ষণের একটি প্রধান মাধ্যম বৃক্ষরোপণ। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়, অক্সিজেন উৎপাদন বেড়ে যায়, ঘূর্ণিঝড়-প্লাবন থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। হাদীসেও বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়মত এসে গেছে, তখন যদি হাতে একটি গাছের চারা থাকে তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৫৬০) অন্য হাদীসে বৃক্ষ রোপণকে সাদকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষরোপণ করে অথবা ফসল আবাদ করে এরপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুস্পদ জন্তু কিছু ভক্ষণ করে তবে তা তার জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৫৩২)।
তিনি আরো বলেন, বিনা প্রয়োজন গাছ কাটতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন। (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৫২৪১)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকরীদের ভালোবাসেন ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২২২)। এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সা. পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-২২৩) এবং অন্য হাদীসে ঈমানের অর্ধেক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-৩৫১৯)। অন্য হাদীসে পবিত্রতা অর্জনকে জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের কার্যকর ভ‚মিকা পালন করার তৌফিক দান করুণ। আমীন!