একনজরে হাটহাজারী জামিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা শেখ আহমদের পরিচিতি
দেশের সর্ববৃহৎ কওমি আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল ঊলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর নবনিযুক্ত প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে মাওলানা শেখ আহমদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় হাটহাজারী জামিয়ার শুরার বৈঠক শেষে তাকে শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
নতুন শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কে এই মাওলানা শেখ আহমদ? তিনি নব্বইয়ের দশক ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে হাটহাজারী মাদরাসার দরসে হাদিসের সম্রাট ছিলেন। তার কাছে হাদিস পড়া ছিল তখনকার ছাত্রদের অন্যতম স্বপ্ন। তার মেধা ও স্মরণশক্তি ঈর্ষণীয়। এর আগে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তালিমাত, বোডিংসহ জামেয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর খুবই আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন মাওলানা শেখ আহমদ। জামিয়ার ও ব্যক্তিগত প্রায় সব কাজেই তিনি আল্লামা শফীর সহযোগী ছিলেন। মাওলানা শেখ আহমদ দেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য অনেক কওমি জামিয়ার শূরা সদস্য এবং শীর্ষ আলেমদের শিক্ষক। এমনকি তিনি হাটহাজারী জামিয়ার বর্তমান চাকরিরত দু-তৃতীয়াংশ শিক্ষকদের শিক্ষক। তিনি আল্লামা আহমদ শফীর বিশেষ খলিফা।
এক নজরে মাওলানা শেখ আহমদ : মাওলানা শেখ আহমদ ১৯৫০ সালে হাটহাজারীর দক্ষিণ মীরেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শুরু থেকে দাওরা পর্যন্ত তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী জামিয়ায় পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষ করে হাটহাজারী জামিয়াতেই তার শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। দীর্ঘকাল তিনি হাটহাজারী জামিয়াতে দরস দেন। প্রসিদ্ধ আছে, তিনি পড়াননি সিলেবাসে এমন কোনো কিতাব নেই। তবে গত ২০০৪ সালে কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই থাকে হাটহাজারী জামিয়া ছাড়তে হয়েছিলো। এরপর ২০০৪ সালে জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরে শায়খুল হাদিস হিসেবে পাঠদান করেন। সর্বশেষ গত তিন বছর আগে তাকে পুনরায় হাটহাজারী জামিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়।
মাওলানা শেখ আহমদের ছাত্রবৃন্দ : রাজধানীর ঢাকা জামিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদের মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মুফতি মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়া আরবিয়ার প্রধান মুফতি, মুফতি হিফজুর রহমান, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া দারুল আরকামের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা সাজিদুর রহমান, হাটহাজারীর জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মুহাদ্দিস, মাওলানা ওমর মেখলী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, মুফতি জসিম উদ্দীন, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমী, নাজিরহাট বড় মাদসার মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুহতামিম, মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী প্রমুখ।
তার রচিত গ্রন্থাবলী : ১- تنظيم المخزون لأسماء العلوم والفنون ২- اصول حديث مع اصول تفسير ৩- قرآنى معلومات ৪- تنظيم الدراية فى الاحاديث الموضوعة ৫- تقرير ابوداؤد ৬- تقرير ترمذى ৭- منهاج البارى شرح بخارى جـ ১-২ ৮- ضياء البردة شرح قصيدة بردة
তাসাউফ তথা আধ্যাত্মিক পরিচয় : মাওলানা শেখ আহমদ মুফতিয়ে আজম মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ. এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ.-এর ইন্তেকালের পর মাওলানা হাফিজুর রহমান (প্রকাশ পীর সাহেব) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। যিনি কুতুবে আলম আল্লামা জমীর উদ্দীন রহ. এর খলিফা ছিলেন। আল্লামা জমীর উদ্দীন সাহেব রহ. ইমাম রব্বানী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এর খলিফা ছিলেন। কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পীর সাহেব হুজুর রহ. আল্লামা শেখ আহমদকে খেলাফত প্রদান করেন। তারপর দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন ও খেলাফত লাভ করেন।