করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসাবে ঘোষণা করা উচিত : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক পণ্য আখ্যায়িত করে বলেছেন, বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত ভাবে ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তৃত্বে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃত্বে বিশ্বাসী। প্রত্যেকেরই যাতে ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা পূরণ হয় সেলক্ষে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কার্যকর করতে সব দেশের একত্রে কাজ করা প্রয়োজন। ডাব্লুএইচও, জিএভিআই এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলো অবশ্যই সদস্য রাষ্ট্রের অধিকারকে সমর্থন করবে এবং ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশগুলোকে সার্বজনীন ভ্যাকসিনের কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে অন্যদেরকেও ভ্যাকসিন তৈরি করতে সহায়তা করা উচিত।
এশিয়ার জন্য বোয়াও ফোরামের সম্মেলনের প্ল্যানারি পর্বে প্রচারিত এবং পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে তিনি এসব বলেন। চার দিনের বার্ষিক বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলন, যার প্রতিপাদ্য ‘এ ওয়াল্ড ইন চেঞ্জ: জয়েন হ্যান্ডস টু ট্রেংদেন গ্লোবাল গভর্নেন্স এন্ড অ্যাডভান্স বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) কোঅপারেশন। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, আইএমএফের সভাপতি, বোয়া ফোরামের মহাসচিবকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সংকটময় সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর তহবিলগুলিতে আরো বেশি প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের মানবসভ্যতার সন্ধিক্ষণে বিশেষত ইতিহাসের চূড়ান্ত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, এই মহামারীর আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাপক, যা ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহামারীর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা এবং অর্থনীতিকে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা টাকার অংকে ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। মহামারীটি এমন কি এই সংকট চলাকালেও কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না তা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক ব্যস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। সার্ক, বিমসটেক, এসএএসইসি, বিবিআইএন এবং বিসিআইএম এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে , বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং এর বাইরেও বহু-মডেল সংযোগের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাস করে যে বিআরআই এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
তিনি বলেন, এই মহাদেশে বিশাল জনসংখ্যার উপাত্ত, বিস্তৃত বাজার এবং প্রযুক্তিগত প্রান্তের সুবিধা রয়েছে। কাজেই, যদি আমরা হাত মিলাই তাহলে উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে পারি যা আমাদের প্রতিশ্রুত এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে। একে অপরের হাত বাড়িয়ে আমাদের ফোরআইআর-এর প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা বাড়ানো দরকার। হাই-টেক পার্ক, ব্রডব্যান্ড এবং স্যাটেলাইট সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আমাদের তরুণদের কেবলমাত্র অনুকরণের জন্য নয়, উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত করে চলেছি। অতএব, একসাথে আমাদের একে অপরের সুবিধাগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি সাইবার-অপরাধসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে হবে। সময়োচিত পদক্ষেপ এশীয় শতাব্দীর সম্ভাবনাগুলো উপলব্ধি করতে আমাদের সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশ একটি অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। যদিও সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্থান থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দূর করতে বিভিন্ন অভিযোজন এবং প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। সংসদে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় ‘প্ল্যানেটরি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আমরা দেশজুড়ে তিন কোটি গাছ রোপণ করছি। আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ও গ্রহণ করেছি যা একটি উন্নত ও সুরক্ষিত ভবিষ্যত এর জন্য সম্পদ জড়িত করতে সহায়তা করবে। আমরা অভিযোজনের জন্য গ্লোবাল সেন্টারের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অফিসের হোস্টিং করছি। এই কেন্দ্র স্থানীয় ভিত্তিক উদ্ভাবনী অভিযোজন কৌশল প্রচারের কাজ করবে।
তিনটি পয়েন্ট পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করেন। প্রথমত, মহামারী দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং ভ্যাকসিনগুলো বিশ্বব্যাপী গণপণ্য হিসাবে ঘোষণা করে সকলের কাছে উপলব্ধ করার জন্য আমাদের মধ্যে দৃঢ় অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা দরকার। আমরা সকলেই বুঝতে পেরেছি যে ভবিষ্যত ফোরআইআর দ্বারা পরিচালিত হবে, যা সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। যে বিরামহীন শারীরিক এবং ডিজিটাল সংযোগই এশীয় শতাব্দীর সুবিধাগুলি অর্জনের মূল চাবিকাঠি হবে। বর্তমান বিশ্বায়নে রাষ্ট্রের অধীনে প্রতিটি দেশকে অভিন্ন মঙ্গলের জন্য তার ভূমিকা পালন করতে হবে। পৃথিবীর কোনও একক দেশ নিজেরা টিকে থাকতে পারে না বলেই দেশসমূহ ও অর্থনীতিকে একে অপরের সন্ধান করতে হবে। আসুন, একত্রে চিন্তা করি, একসাথে কাজ করব এবং একসাথে বেড়ে উঠব।