কারী আবদুল খালিক আসআদী; কোরআর শিক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ এক মনীষী

মুফতি এনায়েতুল্লাহ ||

ধর্মপ্রাণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে। এর প্রমাণ মেলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মসজিদ, হাজার হাজার মাদরাসা ও অসংখ্য খানকা দেখে। দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণও একেবারে কম নয়। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে দ্বীন দরদী মানুষের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়। সাধারণ সম্পদশালীরা তাদের সম্পত্তির কিছু অংশ মসজিদ-মাদরাসা, খানকা-ঈদগাহ ও গোরস্থানসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে দান করে থাকেন। এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘর-বাড়িসহ ভিটেমাটি দান করার নজিরও রয়েছে। ইসলামের প্রচার-প্রসার আর কোরআন-হাদিস শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ আছেন বলেই এখনও দুনিয়ার বুকে ইসলাম টিকে আছে। মহৎপ্রাণ এমন মানুষের বদৌলতে বাংলার জনপদগুলোতে পবিত্র কোরআন শিক্ষার প্রচলন এখন চালু রয়েছে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নয়, একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের নিমিত্তে এমন আত্মত্যাগের ঘটনা সমাজে বিরল। কখনও তা ইতিহাসে পাতায় লেখা হয়, আবার কখনও তা থাকে অনুচ্চারিত। আজ আমরা এমনই এক মহৎপ্রাণ, দ্বীন দরদী মানুষের কথা আলোচনা করবো, যিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ একমাত্র ঘরটি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আলোকিত এই মানুষের নাম- হাফেজ কারী আবদুল খালিক আসআদী।

কারী আবদুল খালিক। এক নামে তাকে ঢাকার আলেমরা চেনেন। হাজার হাজার আলেমের উস্তাদ তিনি। কোরআন শিক্ষায় নিবেদিত শ্যামবর্ণের এই মানুষটির জীবন একটি ইতিহাস। যে ইতিহাস ত্যাগ আর সাধনার। দুনিয়াবিমুখ এই মানুষের জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা। যাকে আমরা তাওয়াক্কুল করি। যে বিশ্বাসের দ্যুতি তার জীবনের কর্মশক্তি। ৮৩ বছর বয়সী কারী আবদুল খালিকের জন্ম বর্তমান বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে ১৯৩৮ সালে। পিতা মৌলভী আরশাদ আলী (রহ.)। ১২ বছর বয়সে তিনি আম্মাকে হারান। মাতৃবিয়োগের এর শোক তাকে দ্বীনের পথে আসতে অনুপ্রেরণা দেয়।

নিজ গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে রাজৈর সিনিয়র মাদরাসায় কিছুদিন পড়ালেখা করেন। পরে ভগ্নিপতি মরহুম মাওলানা ইউসুফের হাত ধরে আলিয়া মাদরাসা ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় চলে যান। অতঃপর ১৯৫৮ সালে ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে হেফজ শেষ করেন। তার হিফজের উস্তাদের নাম হাফেজ ওজিউল্লাহ। হেফজ শেষে হেদায়াতুন্নাহু কিতাব পড়ার পর তিন বছর (১৯৬২-৬৪) তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত তাজবিদুল কুরআন মাদরাসায় কারী ইহসান আহমদ থানভী (রহ.) ও কারী শাকের আহমদ (রহ.)-এর নিকট ইলমুল কেরাত পড়েন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার আব্বার ইন্তেকাল হয়।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে খুলনা শিরোমণি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছরই তিনি বাগেরহাট জেলার রামপাল নিবাসী মরহুম মাওলানা আতহারুল ইসলাম খানের বড় মেয়ে আমিনা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এখন থেকে ৬৩ বছর আগে বাগেরহাটের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য ঢাকা-পাকিস্তান গমন সোজা কথা নয়। তখনকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতিকূলতা জয় করতে সক্ষম হন শুধু কোরআনের ভালোবাসায়। নানা কারণে শিক্ষা জীবনের আনুষ্ঠানিক সফল পরিসমাপ্তি তার হয়ে ওঠেনি। এই না পাওয়াকে তিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতায় তার একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা তাকে সাফল্য এনে দেয়। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন, তাতে তিনি থেমে যাননি, এই পরিচয়কে দুনিয়ার পদ-পদবী লাভ ও সহায়-সম্পত্তি উপার্জনের হাতিয়ার বানাননি। বরং প্রত্যেকটি দিন তিনি নতুনভাবে শুরু করেছেন। তার স্বপ্ন ও ধ্যান ছিলো- ইসলামকে বিজয়ীরূপে দেখা। সমাজের আনাচে-কানাচে কোরআনের শিক্ষা প্রসার ঘটানো।

আজকের আরজাবাদ মাদরাসার সুরম্য ভবন আর রাজকীয় পরিবেশ দেখে কেউ আড়াই দশক আগে সেখানকার অবস্থা কল্পনা করতে পারবে না। উত্তরে দেড়তলা ভবন আর দক্ষিণ ও পূর্ব পার্শ্বে টিনশেড ঘর, মাঝখানে গভীর ডোবা। রাতের পর রাত ট্রাকে করে আনা মাটি কারী সাহেব ছাত্রদের সঙ্গে নিজে মাটির টুকরি বহন করে সেই ডোবা ভরাটের কাজ করেছেন। ভবনগুলো নির্মাণের কাজেও তিনি তত্বাবধান করেছেন। অনেক সময় নির্মাণাধীন ভবনে নিজ হাতে পানিও দিয়েছেন।

১৯৯৯ সাল থেকে আরজাবাদ মাদরাসায় পড়ার সময় খুব কাছে থেকে তাকে দেখেছি। হজরত কারী সাহেব হুজুরের কাছে নুজহাতুল কারি ও ইলমুল কিরাত পড়েছি। তিনি দাওরায়ে হাদিসের ছাত্রদের সপ্তাহে দুইদিন (শনি ও সোমবার) কোরআন পড়াতেন। ছাত্ররা আগ্রহভরে তার ক্লাসে উপস্থিত হতো। মশকের সময় ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন, একাধিকবার একটি শব্দ মশক করাতেন। ভুলের পর ভুল করলেও মশকের সময় তাকে কখনও রাগ করতে দেখিনি। কিন্তু কোনো অনিয়ম করলে তিনি ভীষণ রেগে যেতেন। বিশেষ করে ফজরের পর ছাত্রদের ঘুম তিনি অপছন্দ করতেন। নিয়ম করে ফজরের আজানের পর পর প্রত্যেক রুমে রুমে যেয়ে ছাত্রদের ঘুম থেকে উঠাতেন। মাদরাসার পক্ষ থেকে ছাত্রদের তরবিয়ত ও শাসনের দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত ছিলো। উস্তাদের শাসন কতটা প্রয়োজনীয় তখন না বুঝলেও এখন বুঝি। ছাত্ররা শাসনকে অম্লান বদনে মেনে নিতো।

ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে ছিলেন। গেণ্ডারিয়া জামালুল কুরআন মাদরাসা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি, এর নামকরণও তার। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারীরা আরজাবাদ মাদরাসা জ্বালিয়ে দেয়। তখন তিনি সতীশ সরকার রোড, জোরপুল লেন মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেখানে একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতার জন্য দোয়া করার পর রাজাকাররা তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করলে মসজিদের মোতাওয়াল্লি রাতের আঁধারে তাকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। অতঃপর তিনি স্বীয় শিক্ষক ও অভিভাবক আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী (রহ.)-এর সঙ্গে চট্টগ্রামের শোলকবহর মাদরাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের এক-দেড় বছর পর আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী (রহ.)-এর সঙ্গে শোলকবহর থেকে ফিরে এসে আরজাবাদ মাদরাসা পুনরায় চালুর কাজে আত্মনিয়োগ করন। আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী (রহ.)-এর পরিচালনায় আরজাবাদ মাদরাসা প্রাণ ফিরে পায়, চারদিকে এর সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালে যাত্রাবাড়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর সেখানেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ফরিদাবাদ মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় আরজাবাদ ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি আরজাবাদেই শিক্ষকতা করছেন। বার্ধক্যজনিত নানাবিধ অসুস্থতার দরুণ তিনি বাসা থেকে খুব একটা বের হন না। তার পরও নিয়ম করে মাদরাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। গত শিক্ষাবর্ষে তিনি আরজাবাদ মাদরাসায় ক্লাস নিয়েছেন। মসজিদের জামাতে শরিক হন।

সাদামাটা জীবনের অধিকারী কারী আবদুল খালিক কখনও সহায়-সম্পদ করার দিকে আগ্রহী হননি। হাজার হাজার ছাত্রই তার কাছে সাত রাজার ধন। কোরআন শিক্ষার জন্য কাজ করতে পারাই তার কাছে আনন্দের ও পরম পাওয়ার বিষয়। তার নিজ গ্রামে কোনো কওমি মাদরাসা নেই। এমনকি এখনও ওই এলাকার মানুষ কওমি মাদরাসাকে ‘খারেজি; মাদরাসা বলে ডাকে। এমন পরিবেশে তিনিই প্রথম মাদরাসা হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মৌলভীরহাট ও সায়্যিদ আরশাদ মাদানী মাদরাসাতুল বানাত নামে দু’টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসার নামকরণ করেন শায়খুল আরব ওয়াল আজমের নামে। মাদানী পরিবারের প্রতি এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে সায়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.), সায়্যিদ আরশাদ মাদানী ও সায়্যিদ আসজাদ মাদানীও তাকে ভালোবেসে, তার প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার সফর করেছেন।

১৯৮০ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ ঘরটি মাদরাসার জন্য ওয়াকফ করে দিয়ে স্ত্রী এবং ছোট ছোট ৬ সন্তানকে নিজের চাচার ঘরে রেখে ঘর খুলে মাদরাসার ঘর নির্মাণের জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার শ্বশুর জায়গার দাম পরিশোধ করে নতুন করে ঘর তুলে দেন। সম্পদ বলতে তার এতটুকুই।

কারী আবদুল খালিকের নয় সন্তান। ছয় ছেলে, তিন মেয়ে। বড় ছেলে হাফেজে কোরআন। পরের চারজন মাওলানা। দুই মেয়ের একজন আলেম। দুই জামাতার একজন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়ুয়া আলেম। অন্যজন মুফতি ও মারকাজুদ দাওয়া আল ইসলামিয়ার শিক্ষক। তৃতীয় মেয়ে হিফজ শেষ করার পর এবং এক ছেলে ১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করে জান্নাতের মেহমান হয়েছেন। বর্তমানে সাত সন্তান নিয়ে তার সংসার। কারী সাহেবের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মাঝে হাফেজে কোরআন ১০ জন, মাওলানা ৯ জন, (দাওরা শেষ করে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষালাভকারী ২ জন। দুই নাতিন জামাইও হাফেজ মাওলানা। বর্তমানে কারী সাহেবের পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের ১৫ জন মাদরাসায় পড়াশোনা করছে।

কারী আবদুল খালিক শুধু শিক্ষকতাতেই মনোনিবেশ করেননি। সুলুক-তাসাউফের মেহনতও করেছেন। প্রথমে সায়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) ও পরে সায়্যিদ আরশাদ মাদানীর হাতে বায়াত হন। এদিকে আরজাবাদ মাদরাসার শায়খুল হাদিস মুফতি তাজুল ইসলামও তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন।

দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- সায়্যিদ আসআদ মাদানী রহ., হাফেজে হাদিস আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্তি রহ., মাওলানা গোলাম গাউস হাজারভি রহ., মুফতি মাহমুদ রহ., খতিব উবায়দুল হক রহ., মাওলানা আবদুল করিম শায়খে কৌড়িয়া রহ., মাওলানা তাজাম্মুল আলী জালালাবাদী রহ., মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী রহ., পীর মোহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া রহ., মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. ও মাওলানা আবদুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী রহ.। ষাটের দশকে পড়াশোনার জন্য পাকিস্তান সফর করেছেন। এ ছাড়া একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশে তিনি সৌদি আরবও গমন করেছেন।

আজীবন প্রতিবাদী চেতনার কারী আবদুল খালিক উস্তাদ হিসেবে মোজাহেদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আল্লামা কাসেমীর নেতৃত্বে ইসলামবিরোধী নানাবিধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি মাদানী পরিবারের সঙ্গে কারী সাহেব হুজুরের যোগসূত্র ছিলেন আল্লামা কাসেমী (রহ.)। আল্লামা কাসেমী (রহ.) তিনি অত্যন্ত মান্য করতেন। তার দেখানো পথে, তার রেখে যাওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি আজীবন কাজ করেছেন।

জেনারেল হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি মসজিদের স্থলে খুতবা পাঠের সময় পুলিশের বেয়নেট চার্জে রক্তাক্ত হন। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো শিক্ষাচুক্তি না থাকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তির জন্য দেওবন্দ কর্তৃক মনোনীত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সত্যায়নপত্র নিতে হয়। বিগত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সত্যায়নপত্র দাতাদের একজন কারী আবদুল খালিক আসআদী। এ ছাড়া গত চার দশক যাবত বাংলাদেশে শায়খুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর পরিবারের সদস্যদের দ্বীনী সফরের ব্যবস্থাপনায় জড়িত।

রাজনীতিতেও তিনি বেশ সক্রিয়। ১৯৬৬ সাল থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে জড়ানোর পর অদ্যাবধি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। জমিয়তের ঢাকা মহানগর সহ-সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি খতমে নবুওয়ত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি খতমে নবুওয়ত আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

আগেই বলেছি, স্পষ্টবাদী ও আমানতদার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার। তিনি সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত। পরিচিত যে কেউ তাকে একবাক্যে দ্বীনের একজন নিঃস্বার্থ খাদেম হিসেবে অভিহিত করেন। নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের অনেকেই তার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অসংখ্য পরিবার স্বাবলম্বী হলেও তিনি ছয় দশক ধরে ঢাকায় বাস করলেও এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকায় তার কোনো সহায়-সম্পদ নেই এবং গ্রামেও কোনো ফসলি জমি-জমা নেই। সারাজীবন মসজিদ-মাদরাসা, দ্বীনী সংগঠন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের পেছনে নিজের সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করছেন।

কারী আবদুল খালিকের মতো নিঃস্বার্থ মানুষ এই সময়ে বিরল। ছাত্র অন্তপ্রাণ এই দরদী শিক্ষকের স্নেহ, মায়া-মমতা আর ভালোবাসার ফসল হিসেবে দেশের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও কারী। আলোকিত এক সমাজের দিকপাল তিনি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতার সঙ্গে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত থাকার তওফিক দান করুন। তার স্বপ্নগুলো আলোর মুখ দেখুক।

লেখক : সাংবাদিক

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!