‘কাল খেলাফত মজলিসের প্রেস ব্রিফিং; আসতে পারে বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা’

গত আগস্ট মাসেই আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল-বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দিচ্ছে খেলাফত মজলিস। সেই আলোচনা এখন জোরালো হয়ে উঠেছে দলটিতে। আগামীকাল (১ অক্টোবর) শুক্রবার পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকার একটি হোটেল মিলনায়তনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় শুরার বৈঠক অনুষ্ঠান হবে। অন্তত দুই শতাধিক শুরা সদস্য এতে অংশ নেবেন।দলের কেন্দ্রীয় শুরার বৈঠক থেকে এমন ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী একাধিক দায়িত্বশীল এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি-জোট নিষ্ক্রিয় ও অকার্যকর। আর এই জোটে থাকার রাজনৈতিক মূল্যায়নও পায়নি মজলিস। ২০১৯ সালে দলের মজলিসে শুরার বৈঠকেই বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসার মৌলিক সিদ্ধান্ত ছিল। ওই সিদ্ধান্ত এখন চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

দেশের সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, এগুলো এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কাল শুরার বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হবে, তা-ই হবে। অগ্রিম বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ২০১৯ সালে শুরার সিদ্ধান্ত ছিল—অকার্যকর হওয়ায় ২০ দলীয় জোটে আর যাবে না মজলিস। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘হ্যাঁ, শুরার মতামত এমন ছিল।’

এর আগে, গত ১৪ জুলাই জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে বিএনপি জোট ছেড়ে দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এরপর ১৮ জুলাই থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেন ওই দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা। বর্তমানে জমিয়তের অধিকাংশ নেতা জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, আমরা মহাসচিবের মুক্তির জন্য আইনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তার বাড়িঘরের খবর নেওয়া হচ্ছে।’

তবে খেলাফত মজলিসের জোট ত্যাগ করার পেছনে রাজনৈতিক কারণই প্রধান বলে জানিয়ে নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় চাপ ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে নতুন আঙ্গিকে চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা চলছে মজলিসে। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলের অনুসারী ও নেতাকর্মীদের সামনে মজলিসের সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থান ও জোটগত রাজনীতি নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করতে পারেন দলের শীর্ষ নেতারা।

এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের শুরার বৈঠক হচ্ছে—অবশ্যই এর তাৎপর্য আছে। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক দল, সেহেতু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকতেই পারে। আশা করি, বৈঠকে দুই শতাধিক সদস্যের কাছাকাছি অংশগ্রহণ করবেন।

জোট ছাড়ার ঘোষণা কি আসতে পারে আগামীকাল? জানতে চাইলে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, বৈঠক ডাকা হয়েছে দলের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তাই বৈঠকের আগে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব না। অনেক বিষয়েই সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বৈঠকে যা হবে; আগামীকাল বিকেল ৪টায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে তা জানিয়ে দিবো।

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, বর্তমানে ২০ দলীয় জোট কার্যকর নয়। এই জোটের রাজনৈতিক কোনও তৎপরতা নেই। খেলাফত মজলিস এখন জোটগত কোনও রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না। নিজেদের দলীয় কাজ নিয়ে তৎপর। কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমরা দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে আমাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। জোট ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল শুরার বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হবে, তা-ই হবে। অগ্রিম বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করেছিল বিএনপি। পরে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নতুন ১২টি দলের সংযুক্তির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দলীয় জোটে। এরপর জোটের পরিধি দাঁড়ায় ২০ দলে। তবে ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি, ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে গেলেও একই নামে এসব দলের একাংশকে জোটে রেখে দেয় বিএনপি। জোট ছেড়ে যায় আন্দালিভ রহমান পার্থের বিজেপিও। সর্বশেষ, গত ১৮ জুলাই জমিয়ত বেরিয়ে গেলেও একই নামে আরেকটি অংশ রয়েছে জোটে। তবে খেলাফত মজলিস বেরিয়ে গেলে এই নামে কোনও অংশকে জোটে রাখবে কিনা বিএনপি, এমন কোনও পরিকল্পনার কথা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!