‘কাল বেফাকের বৈঠক; সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আলোচনায় যারা’
যিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি হবেন, তিনিই হাইআতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ মজলিসে আমেলার বৈঠক আগামীকাল ৩০ অক্টোবর শনিবার যাত্রাবাড়ীর কাজলায় বেফাকের নতুন ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বেফাকের বেশ কিছু এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে সংস্থাটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্ধারণ অন্যতম। এছাড়াও আমেলার বিগত ৯ টি বৈঠকের প্রতিবেদন পেশ করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন গহরপুরী।
২০১৭ সালে থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির চারজন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইন্তেকাল করেছেন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আল-হাইআতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান পদটি প্রায় ১১ মাস ২৩ দিন শূন্য রয়েছে। সাম্প্রতিক এ শূন্যপদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই পদে কে হচ্ছেন; তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কেননা নিয়মানুযায়ী বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি হবেন যিনি তিনিই হবেন হাইআতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান।
সর্বশেষ মুফতি ওয়াক্কাস রহ.-এর ইন্তেকালের পর নতুন করে এখনো কোন সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্ধারণ করা হয়নি। বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি কে হচ্ছেন এ বিষয়টি জানতে বরাবরই আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকে মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের মাঝে। এ পদটিতে কে আসতে পারেন এ নিয়ে বেশ কয়েকজনের শোনা যাচ্ছে। তন্মধ্যে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এগিয়ে আছেন তিন বরেণ্য সিনিয়র আলেম। তারা হলেন, মৌলভীবাজার আল জামিয়াতুল ইসলাম দারুল উলুমের শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল বারী ধর্মপুরী। তিনি বর্তমানে বেফাকের প্রথম সহ-সভাপতি। ফেনীর মাওলানা নুরুল ইসলাম আদিব ও চট্টগ্রামের বাবুনগর জামিয়ার মুহতামিম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বেফাকের পদত্যাগী মহাসচিব জামিয়া ইমদাদুল ঊলূম ফরিদাবাদের মুহতামিম মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসকে কো-চেয়ারম্যান করার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
কো-চেয়ারম্যানের দৌড়ে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর পাল্লাও ভারী। একাধিক বলয় থেকে তার নামও উচ্চারিত হচ্ছে। আছে মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদের নামও। তাছাড়া বর্তমান মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হককেও কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু অস্থিরতা ছাড়া এগিয়ে আছেন তিনিও। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বেফাকের কর্মকর্তারা। সহ-সভাপতি পদে অনেক প্রবীণ ও যোগ্য মুরব্বী আছেন আমেলার সিদ্ধান্তে কেউ একজন দায়িত্ব বলেছেন তারা। এদিকে শুধু হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান একাধিক করার দাবিও উঠছে। তারা বলছেন, বেফাক থেকে একজনকে কো-চেয়ারম্যান করা হোক। আর বাকি পাঁচবোর্ড থেকেও জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে করা হোক কো-চেয়ারম্যান। তবে এক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। কমিটির সকল সদস্য সম্মতি জ্ঞাপন করলে সংশোধন করা যেতে পারে হাইয়াতুল উলইয়ার গঠনতন্ত্র।
বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন গহরপুরী জানিয়েছেন, বেফাকের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন প্রায় ৩২জন। মজলিসে আমেলার বৈঠকে আমেলার সদস্যদের অনুমোদনের মাধ্যমে কেউ একজন বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। এবং পরবর্তীতে তিনিই কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রসঙ্গত, বেফাকের সহ-সভাপতিদের মধ্য থেকে আমেলার বৈঠককে একজনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এরপর বেফাকে সিনিয়রর সহ-সভাপতিই আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ.। তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। আর প্রতিষ্ঠাকালীন কো-চেয়ারম্যান ছিলেন মাওলানা আশরাফ আলী রহ.। তিনি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। এরপর যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। একই সময়ে বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.। তিনিও ইন্তেকাল করেছেন ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর। তার ইন্তেকালের পর সর্বশেষ এই পদে নিয়োগ পান মুফতি ওয়াক্কাস রহ.। তবে তিনিও গত ৩১ মার্চ (বুধবার) ভোর ৪.৩০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার মহাখালী শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর প্রায় ১১ মাস ধরে শূন্য রয়েছে এ পদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রায় সব মাদরাসার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। দেশের আঞ্চলিক পাঁচবোর্ড ও বেফাক বোর্ডের তাকমিল জামাতকে মাস্টার্স (এম এ) সমমান দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছিলো এ অথরিটি। বোর্ড গঠনের পর গত ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসাকে মাস্টার্সের (এম. এ) স্বীকৃতি দেন।