‘চরমোনাই মাহফিল মূলত মানুষকে মাওলা পাকের পাগল বানিয়ে ছেড়ে দেয়’
চরমোনাইর শততম বার্ষিক মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দুনিয়া হলো মাকাল ফলের মতো। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পাগল হয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতকে নষ্ট করা যাবেনা। দুনিয়ার সকল মানুষই পাগল। কেউ পদ-পদবীর জন্য পাগল, কেউ এমপি-মন্ত্রী হওয়ার পাগল, কিন্তু একদল আছে মাওলা পাকের পাগল। চরমোনাই মাহফিল মূলত মানুষকে মাওলা পাকের পাগল বানিয়ে ছেড়ে দেয়। এতে মানুষ দুনিয়ার মোহ ছেড়ে দিয়ে দ্বীনের পাবন্দ হয়ে যায়। এজন্য আমাদের সবাইকে দুনিয়ার হাকিকত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে। সবাইকে চিন্তা করতে হবে। মুরাকাবা করতে হবে। দুনিয়ার সকল মানুষ এমনকি রাজা-বাদশা এবং রাস্তার ফকীর সবাই বিবস্ত্র অবস্থায় দুনিয়ার জমিনে জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার দুনিয়ার সফর শেষে কবর পথেও একই অবস্থা তথা ৩টুকরা সাদা কাপড় নিয়েই বিদায় নিতে হবে। দুনিয়ায় ভাগ্যক্রমে কেউ ধনবান হয়ে চিরস্থায়ী জগতে জান্নাতের নাজ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়া যাবেনা। দুনিয়ার সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চিরস্থায়ী জগতের সামান জোগাড় করতে হবে।
আজ (২২ নভেম্বর) বুধবার বাদ জোহর ঐতিহাসিক চরমোনাই ময়দানে শততম বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা করেন চরমোনাই পীর। মাহফিলে আগত মুসল্লীদের চিকিৎসার জন্য ৪০ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক টীমের মাধ্যমে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক ৫টি এ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। মাহফিলের ২য় দিন সকাল ১০টায় স্টেজে জাতীয় ওলামা সম্মেলন এবং ৩য় দিন সকাল ১০টায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ নভেম্বর’২৩ শনিবার আনুমানিক সকাল ৮টায় আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে। ওলামা সম্মেলনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওলামায়ে কেরাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। মাহফিলে মূল ৭টি বয়ান করবেন যথাক্রমে আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এবং নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
মাহফিলে আগত নতুনদের উদ্দেশ্যে চরমোনাই পীর বলেন, চরমোনাইতে এসে নিয়তকে পরিবর্তন করে ৩দিন বয়ান শুনে মনের অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। দিলের মধ্য থেকে দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে যায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলী হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্ততি নিতে হবে। এক মূহুর্তও যেন নেক আমলের বাহিরে না কাটে। মনে রাখতে হবে, চরমোনাই মাহফিল প্রতিষ্ঠাই করা হয়েছে মানুষের দিলের অবস্থা পরিবর্তন করে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। সুতরাং সে উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই এই বিশাল আয়োজন। চরমোনাইতে লোক ভারি করার দরকার নেই। যারা চরমোনাইর লেবেল ব্যবহার করে দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় তারা মূলত চরমোনাইর মুরীদ নয়, বরং এরা ধান্দাবাজ। কেউ নির্বাচন এলে দুনিয়াবী নেতা-নেত্রীদের খুশী করার জন্য বলে যে, এই দুইমাস আমি চরমোনাইর মুরিদ না। এরা মূলত এই দরবারকে হাসি-তামাশার খোড়াক বানাতে চায়। এদের চরমোনাইর মুরিদ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এসব নামধারী মুরীদদের থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।