জমিয়তে ফিরলেন মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তিন নেতা

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সদস্য ফরম পূরণ করে যোগদান করলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শেখ মুজীবুর রহমান, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আব্দুল হক কাউসারী ও পটুয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

আজ (৯ ডিসেম্বর) শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর জামেয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা জমিয়তে যোগদান করেন। জমিয়তেরে সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদারের সভাপতিত্বে যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নূর মোহাম্মাদ কাসেমী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া, সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর সহ-সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন ঢাকুবী, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা রিদওয়ান মাযহারী, সাবেক সহ-সভাপতি মাওলানা মাঈনুদ্দীন মানিক, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ কাউসার আহমদ ও মাওলানা আব্দুর রহমান জামীল প্রমুখ।

২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত সংগঠনেরকেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে দল থেকে বহিস্কারের কথা জানানো হয়। মুফতি ওয়াক্কাসকে বহিস্কারের মধ্যে দিয়ে জমিয়ত ভাঙন স্পষ্ট হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দলের তৎকালীন সভাপতি আল্লামা আব্দুল মোমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাশেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, সহ সভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূইয়া, জোনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুঞ্জুরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের সহ সভাপতি পদ স্থগিত করে গত ১৫-০২-১৭ তারিখে শোকজ করা হয়। যার জবাব ১৪-১২-১৮ তারিখের মধ্যে দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সেই শোকজ নোটিশের জবাব দেননি। সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে তাকে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড বিশেষ করে জমিয়ত সুরুক্ষা কমিটির নামে চালানো অবৈধ তৎপরতা এবং আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে ডাকা অবৈধ কনভেনশন স্থগিত করারা আহ্বান জানানো হয় এবং তাকে সহ সভাপতির পদ পুনরায় ফিরিয়ে দেয়ার আঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো সাড়া দেননি তিনি। তাই তার সকল গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও সংগঠনবিরোধী তৎপরতার কারণে এবং দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রাথমিক সদস্য পদ বিলুপ্তিসহ তাকে (ওয়াক্কাস) দল থেকে বহিষ্কার করা হল। প্রেসক্লাবে কনভেনশনের আহ্বায়ক ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ সভাপতি মাওলানা মনসুর হাসান রায়পুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমানেরদের মজলিসে আমেলার পদ স্থগিত করা হয়েছে। এবং তাদের দল থেকে কেন বহিষ্কার করা হবে না মর্মে আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে সভাপতি বরাবর জবাব দেয়ার জন্য অবগত করা হয়েছে। তাদের জবাব যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে সভাপতি তাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে পারবেন।

এদিকে ওই বছর বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেস ক্লাবে জাতীয় সম্মেলন করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কারের একদিন পর ১২১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মুফতি ওয়াক্কাস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এর আগে বুধবার (১০ জানুয়ারি) পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে ভেঙে যায় বিএনপি জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। বুধবার বিকালে দলটির মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী অংশের নেতারা দলের নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাসকে বহিষ্কার করেন। বৃহস্পতিবার মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে সভাপতি ও মুফতি শেখ মুজিবুর রহমানকে মহাসচিব করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়।

সম্মেলনে মুফতি ওয়াক্কাস বলেন, জমিয়তের ইতিহাসে আত্মত্যাগের ইতিহাসে অনেক। অনেকেই জমিয়তের কাণ্ডারী সেজে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করেছেন। এসব বিভ্রান্তকারীরা আমার পদবী প্রসঙ্গে যেসব কথা বলেছে, তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের কোনও আদর্শ বিলীন করে কাজ করার জন্য জমিয়ত সৃষ্টি হয় নাই। যে কোনও মূল্যে জমিয়ত নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে জমিয়তের ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুফতি ওয়াক্কাস আগামী ৩১ মার্চ ঢাকায় জমিয়তের জাতীয় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন। তার আগে সব জেলা ও বিভাগে সম্মেলন করে কমিটি গঠন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব কর্মসূচি প্রণয়ন চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

নবনির্বাচিত মহাসচিব মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে যারা জমিয়তকে কলুষিত করেছেন, তৃণমূল পর্যায়ে জমিয়তের ভিত্তিকে মজবুত করে তাদের সমুচিত জবাব দিতে হবে।’ সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা মনছুরুল হাসান রায়পুরী বলেন, ‘হাক্কানি ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে জমিয়তের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে জমিয়তকে প্রকৃত ধারায় ফিরিয়ে আনা হবে।’

সম্মেলনে ঘোষিত কমিটির নেতারা হলেন, সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা মনছুরুল হাসান রায়পুরী, সহ-সভাপতি মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল হক কাউসারী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা বেলায়েত হোসেন আল ফিরোজি, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ, মুফতি জাকির হোসাইন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম, মুফতি সুলতান আহমদ, প্রচার সম্পাদক, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালীম বিন হারুন, যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি রেদওয়াননুল বারী সিরাজী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক তোফায়েল গাজালি।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!