তাওবার মাধ্যমেই হিজরী নববর্ষ উদযাপন হোক

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী বলেছেন, ১৪৪৩ হিজরীর প্রথম জুমা আজ। জীবনে আরো একটি নতুন হিজরী বর্ষ পেয়েছি, এই পাওয়া আমাদের জীবন থেকে আরো একটি বছর হারিয়ে গেছে এটাই স্মরণ করিয়ে দেয়। হারানো বছরে কত লোক দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। আমিও চলে যেতে পারতাম, আমি চলে গেলে পুঁজিবিহীন দুর্ভাগা অবস্থায় চলে যেতাম। কারণ হারানো একটি বছরের পুঁজির বিনিময়ে আমার কি অর্জন ছিল, নাফরমানী আর আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। হারানো বছরের গুনাহের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবার মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। এতে করে নতুন শুরু হওয়া বছরটা কবরের পাথেয় অর্জনের বছর হতে পারে। আজ (১৩ আগষ্ট) শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

পেশ ইমাম বলেন, আমাদের বোকামীর অন্ত নেই সেই জন্য একটি বছর হারানোর পর লাভ-ক্ষতি হিসাব না কষে নববর্ষের আনন্দ উদযাপনে মেতে উঠি। রাসুলে পাক সা. বলেন, আমি দিনে সত্তরবারের উর্ধে ভিন্ন বর্ণনামতে একশত বারের উর্ধে তাওবা করি। রাসুলে পাক সা. নিষ্পাপ, তাঁর একটি মুহুর্তও তিঁনি অপচয় করেছেন বা তাঁর অপচয় হয়েছে মুমিন বলতেই এটা বিশ্বাস করে না। তিঁনি একটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সময় এই দিনকে কতটুকু কাজে লাগানো হয়েছে? এই দিনে কতটুকু অর্জন হয়েছে? আল্লাহ তায়ালার অসীম মর্যাদার সামনে আমি সসীম এর কি উত্তর হবে? এই ভেবে রাসুলে পাক সা. সত্তর বার তাওবা করতেন। জীবনে একটি বছর চলে গেছে যা কোনো দিন ফিরে আসবে না। এ বিষয়ে আমাদের কোন অনুশোচনা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়েছে বা নিজের উপর জুলুম করেছে অতঃপর আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া ক্ষমা কারার কে আছে? অতএব হিজরী নববর্ষ উদযাপন হবে তাওবার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, ইসলামে চারটি সম্মানিত মাস রয়েছে, মাহে জিলক্বাদ, জিলহজ, মুহাররম ও রজব। হিজরী বর্ষের শেষ মাসটি হল জিলহজ তথা সম্মানিত মাস। হিজরী বর্ষের শুরুর মাসটি হল মুহাররম তথা সম্মানিত মাস। বান্দার বছরের শুরু শেষ যেন সম্মান জনকভাবে হয় তার জন্য হিজরী বর্ষের শুরু শেষ দুটাকেই সম্মানিত মাস দিয়ে করা হয়েছে। বান্দার গুনাহ হয়ে যায়, গুনাহ হওয়া মানে অসম্মানিত হয়ে যাওয়া। এই অসম্মান থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো তাওবা ও আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব। আল্লাহ তায়ালা সবসময় তাওবা কবুল করলেও তাওবা কবুল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা কিছু রাত, দিন, ক্ষণ, মাসকে পিক-আওয়ার হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যেমন রমজান, লাইলাতুল কদর , শেষরাত্রি, ঈদের রাত্রি, এর মধ্যে হিজরী নববর্ষের শুরুর মাস তথা মুহাররম মাসটি ও খুব গুরুত্বপূর্ণ মার্যাদা পূর্ণ মাস। এ মাসটিকে বলা হয় শাহরুল্লাহিল মুহাররম, তথা সম্মানিত আল্লাহর মাস। সব মাসইতো আল্লাহ তায়ালার মাস। মুহররম মাসটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার মাস। এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবুজর বলেন, ‘আমি রাসুলে পাক সা. থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাতের উত্তম অংশ কোনটা? উত্তম মাস কোনটা? রাসুলে পাক সা. উত্তর দেন- রাতের উত্তম অংশ মধ্যরার আর উত্তম মাস মুহাররম যেটাকে তোমরা আল্লাহ তায়ালার মাস বলে থাক ‘ নাসায়ী শরীফ। রমজানের পরে উত্তম মাস হল মুহাররম। এরকমভাবে রাসুলে পাক সা. বলেন-রমজানের পরে সবচাইতে উত্তম রোজা হল মুহাররমের রোজা। মুসলিম শরীফ।

তিনি আরো বলেন, রমজানের রোজার পরে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ রোজা হল শাবান ও মুহাররমের রোজা। মুহাররম মাসে এমন একটি রোজাও আছে যেই রোজাটির ব্যাপারে রাসুলে পাক সা. বলেন, আশুরা তথা মুহাররমের দশ তারিখের রোজার বিনিময়ে আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশাকরি আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। এই রোজা রাখার নিয়ম হলো দশ-ই-মুহাররমের সাথে পূর্বে অথবা পরে একদিন যোগ করে দুটি রোজা রাখা। তাওবা ও ইবাদাতের মাধ্যমে হিজরীর এই বর্ষকে আখিরাতের পুঁজি হিসেবে গঠন করার আল্লাহ তায়ালা যেন তৌফিক দান করেন। আমিন।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!