মানবতার মুমূর্ষদশা থেকে মানবতাকে মুক্তি দিতে বিশ্বনবীকে প্রেরণ করা হয়েছে

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেছেন, মানবতার মুমূর্ষদশা থেকে মানুষ ও মানবতাকে মুক্তি দিতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রিয় নবী মর্যাদা ও সম্মানের দিক থেকে ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । মহান আল্লাহ বলেন, আর তখন কি অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং এই লোকদের বিরুদ্ধে আপনাকে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব। (সূরা নিসা : ৪০) আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)। আজ (২৯ অক্টোবর) শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

পেশ ইমাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্য সব নবীদের চাইতে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গনীমাতের (যুদ্ধলব্ধ) অর্থ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকার এবং মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য (নবী করে) পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমন-ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে। ( মুসলিম :১০৫৪) আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘আমিই হলাম সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার মাথার উপর থেকে মাটি সরে যাবে (অর্থ্যাৎ আমি কবর থেকে সর্বপ্রথম হাশরের মাঠে উঠব) কিন্তু এতে কোন অহংকার নেই। আর আমাকে প্রশংসার পতাকা দেয়া হবে, তাতেও কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব মানবজাতির নেতা, এতেও আমার কোন অহংকার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি, এতেও কোন অহংকার নেই। (সূনান আদ দারেমী : ৫৮ )। উম্মতে মুহাম্মদীকে এমন কিছু সম্মাননা আল্লাহ দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মতকে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত জাতির আবির্ভাব হয়েছে, তন্মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদীই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)।

তিনি আরো বলেন, সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমাবার হলো শ্রেষ্ঠতম দিন। আগেকার উম্মত এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমরা শেষ উম্মত। তবে কিয়ামতের দিন আমরা সবার অগ্রগামী হব। কারণ আগের লোকদের কিতাব দেয়া হয় এবং এক পবিত্র দিনে ইবাদত করা তাদের ওপর ফরজ করা হয়। কিন্তু তারা তাতে মতভেদ করে। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ দিনটির সন্ধান দেন। এ ব্যাপারে সব উম্মত আমাদের অনুগামী। ইহুদিরা পরের দিন তথা শনিবার এবং খ্রিস্টানরা এর পরের দিন তথা রোববারকে মর্যাদার দিন হিসেবে সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৫)। মহান আল্লাহ এই উম্মতের ভুল ত্রুটি ও গোনাহের পরিকল্পনা ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বান্দাদের দোয়া করতে শিখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘পরওয়ারদেগার, আমরা যদি বিস্মৃত হই কিংবা ভুল করে ফেলি, তাহলে তুমি আমাদের পাকড়াও কোরো না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬) সুতরাং শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মান আমাদেরকে বজায় রাখতে হবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো পথেই আমাদেরকে চলতে হবে। রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!