রমজানের শেষ দশক সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, রহমত মাগফিরাত নাজাতের মাস মহিমান্বিত রমজান মাস ক্রমেই শেষ হতে চলেছে। রমজানের বিগত দিনগুলোতে আমরা কতটুকু রহমত আর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, আমাদের গুনাহ আমরা মাফ করাতে পারছি কিনা এসব বিয়য়ে আমাদের আত্মপোলদ্ধি, আত্মসমালোচনা অত্যন্ত জরুরি। রমজানের তিন দশকের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ দশক শেষ দশক। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের কারো কারো মাঝে রমজানের শেষ দিকে ঈদের কেনাকাটা, ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। ঈদে কোন ড্রেস কেনা হবে, কী খাওয়া হবে, কোথায় ঘুরতে যাওয়া হবে এগুলো মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা গৌন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আজ (৩০ এপ্রিল) শুক্রবার ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের জুমার বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. শেষ দশকে যে পরিমাণ আমল করতেন, অন্য কোনো সময় এত বেশি আমল করতেন না। হযরত আয়েশা (রা.) আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) প্রথম বিশ দিন সালত আদায় করতেন ও ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ দশ দিন ঘুমাতেন না। বরং সালাতে মনোনিবেশ করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে শুধু নিজেই ইবাদত করতেন না। বরং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও অধিক ইবাদাত করতে উৎসাহ দিতেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশ দিন আসত, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিধেয় বস্ত্রকে শক্ত করে বাঁধতেন, রাত জেগে ইবাদাত করতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারী, ২০২৪)। রমজানের শেষ দশকের এক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ইতেকাফ। মসজিদে অবস্থান করে, একাগ্রচিত্তে ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন হওয়ার নাম ইতেকাফ। মহানবী (সা.) নিজে এসময় ইতেকাফ করতেন, অন্যদেরও ইতেকাফ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পরে তাঁর স্ত্রীগণও ইতেকাফ করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতেকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ দশকে ইতেকাফ করে। (মুসলিম, হাদীস নং-১১৭৬)। রমজানের শেষ দশকের মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কদর রজনী। পবিত্র কোরআনে কদর রজনীকে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। (সূরা কদর, আয়াত নং-৩)।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের সবচেয় কার্যকর পদ্ধতি যাকত। সাম্য ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যাকাতের ভ‚মিকা সর্বজন স্বীকৃত। যাকত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। (মুসলিম, হাদীস নং-১৬) আর্থিকভাবে সক্ষম, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের উপর যাকাত আদায় করা আবশ্যক। যাকাত আদায় না কারী ব্যক্তির জন্য মৃত্যু পরবর্তী জীবনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ শাস্তি। বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে যাকাতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দান-সাদকা করা, অসহায় মানুষকে সাহায্য করা, ক্ষুধার্থকে অন্ন দান করা আমাদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন!