রমজান পরবর্তী মুমিনের কর্মসূচি

এক. আর কিছু করেন আর নাই করেন, অন্তত ফরজ রোজা তো আদায় করেছেন। এটাও তো বিশাল প্রাপ্তি, যদি আল্লাহ কবুল করেন। বলুন আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আরেকটু কষ্ট করে শাওয়াল মাসের ৬ টি রোজা রাখার নিয়ত করা যায় না? জানেন এই রোজার ফজিলত? মাত্র এই ছয়টি রোজার মাধ্যমে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব দেয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ যে ব্যক্তি রমজানের রোজা পূর্ণ রাখলো, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরো ৬ টি রোজা রাখলো, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখলো। (সহিহ মুসলিম)

আর মাঝেমধ্যে নফল রোজা রাখার নিয়ত তো করাই যায়। বিশেষত প্রতি সোম ও বৃহষ্পতিবার, তাছাড়া আইয়ামে বিজসহ অন্যান্য নফল রোজা। প্রতিটি রোজার রয়েছে স্বতন্ত্র ফজিলত। স্বাস্থ্যগত উপকারিতা তো আছেই।

দুই. কমবেশি সবাই চেষ্টা করেছেন নিজেকে গুনাহ থেকে মুক্ত রাখতে। বিশেষত গিবত, ঝগড়াঝাটিসহ বান্দার হক সংশ্লিষ্ট গুনাহ ইত্যাদি। এটাকে দাত কামড়িয়ে হলেও ধরে রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার জমানো সওয়াব গিবতের মাধ্যমে আরেকজনকে দিয়ে দিচ্ছেন। বান্দার হক সংশ্লিষ্ট বান্দাহ ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। অতএব সিদ্ধান্ত আপনার। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ তুমি হারাম থেকে বেঁচে থাকো, তাহলে মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি ইবাদতকারী হতে পারবে।

তিন. সাধ্যানুযায়ী দান সাদাকাহ করেছেন নিশ্চয়। এটাকে সারাবছর ধরে রাখুন। প্রতিদিন সামান্য হলেও দান করুন। এতে লস নেই। আপনার প্রতিটি দান আপনার একাউন্টেই জমা হচ্ছে বহুগুণ হারে। এতে রয়েছে ইহ ও পরকালীন উপকারিতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ দানে সম্পদ কমে না। (সহিহ মুসলিম)

চার. সাহরিতে ওঠে দুই চার রাকাত তাহাজ্জুদ প্রায় দিনই আপনি পড়েছেন নিশ্চয়। এটাকে মাঝেমধ্যে পড়ার চেষ্টা করুন। এই সময় দুয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ، يَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ ؟ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ

নিশ্চয় আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। তারপর বলেন, কে আছো আমার কাছে দুয়া করবে, আমি তার দুয়া কবুল করবো। কে আছো অন্য কিছু চাইবে আমি তাকে তা দান করবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। (সহিহ বুখারী) তাছাড়া আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়েও দুয়া কবুল হয়। ফরজ সালাতের সালাম ফেরানোর পরও দুয়া কবুল হয়। এই সময়গুলোকে কাজে লাগান।

পাঁচ. অনেকেই কয়েক খতম কুরআন পড়েছেন রামাজানে। আবার অনেকে খতম দিতে না পারলেও চেষ্টা করেছেন সাধ্যমতো কুরআনের সাথে সময় কাটানোর। এটাকে ধরে রাখুন। অত্যন্ত মুখস্থ সুরাগুলো অবসরে জপতে থাকুন। এতে ওজুও লাগবেনা। সুরা ইখলাস কার মুখস্থ নেই। ছোট এই সুরাটি তিনবার পড়লে পূর্ণ এক খতম কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ সুরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ মুসলিম)

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!