শায়খুল হাদিস ভাদেশ্বরী সম্পর্কে কয়েক লাইন
শাইখুল হাদিস সাদ উদ্দীন ভাদেশ্বরী রহমতুল্লাহি আলায়হি যতটা প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, ততটা খ্যাতি ও শুহরত তিনি পাননি। শাইখুল হাদিস আল্লামা গহরপুরী রহমতুল্লাহি আলায়হি গহরপুরের প্রতিষ্ঠালগ্নে যেকজন শাগরেদকে নিজ হাতে গড়েছিলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। এবং প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যেরও অধিকারী ছিলেন।
কেবল হাদিসের মসনদই নয়, আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির নাড়ীর খবরও তাঁর নখদর্পণে ছিল। কিন্তু যে নিভৃতচারী জীবন তিনি যাপন করতেন, সাদা চোখে দেখলে মনে হতো দারস-তাদরিসের বাইরের জিন্দেগি সম্বন্ধে বুঝি তিনি অন্যদের মতোই বেখবর।
গহরপুরে হাদিসের ছাত্রদের কাছে তাঁর দরস ছিল খুবই আগ্রহের জায়গা। গহরপুরে আমি নিচের দিকে কয়েক জামাত পড়েছি, তাই হুজুরের দরসে বসার সৌভাগ্য হয়নি কখনো, কিন্তু তাঁর দরসগ্রহণকারী বড় ভাইদের কাছে প্রায়ই শোনা হতো তাঁর দূরদর্শী চিন্তা ও প্রজ্ঞামূলক তাকরিরের গল্প।
গহরপুর মাদরাসা মসজিদে জুমাপূর্ব বয়ান রাখতেন তিনি। দরসে না বসলেও এই বয়ানে বসা হতো প্রায়ই। আরব বসন্তের ঢেউয়ে লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফি যখন ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন চারিদিকে আরব বসন্তের সপ্রশংস বিশ্লেষণ চলছিল। এই জাগরণের স্বপক্ষে তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরগরম। হুজুর এই সময়ে গহরপুরের জুমার বয়ানে খুব শক্তভাবে ক্রিটিক করেছিলেন এই জাগরণকে। আমার মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, এই জাগরণ আরব মুসলমানদের কোনো ফায়দাই দেবে না। উল্টো আরও বিপাকে ফেলবে। জাগরণপরবর্তী দিনগুলো আরও কঠোরভাবে আগমন করবে তাদের কাছে। অথচ বাঘা বাঘা মুসলিম বিশ্লেষকরাও তখন আরব বসন্তকে আরব মুসলমানদের মুক্তির জাগরণ হিসেবে দেখছিলেন।
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন প্রসঙ্গে তিনি খুব শক্তভাবে বলেছিলেন, লিবিয়ার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবে, গাদ্দাফি তাদের জন্য কী ছিল।
১০ বছর আগের সেই বয়ান আর আজকের আরব ও লিবিয়া-পরিস্থিতি সামনে রাখলে সহজেই ধরতে পারবেন হাদিসের মসনদে সমাসীন গহরপুরের নিভৃতপল্লির প্রচারবিমুখ এক দরবেশ কতটা সচেতনতা ও দূরদর্শী চিন্তা লালন করতেন বিশ্ব রাজনীতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে।
হুজুর গত শুক্রবার (২৩ জুলাই ২০২১) বিকাল ৪ ঘটিকার দিকে ইন্তেকাল করেছেন। রাত সাড়ে নয়টার তাঁর জানাযা। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মরহুম এবং মাগফুর করুন। আমিন।