সরকার  শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সরকার শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ বিতরণসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার সংকট মোকাবিলায় শ্রমিকদের বেতনের জন্য ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আজ (৩০ এপ্রিল) শুক্রবার আগামীকাল ‘মহান মে দিবস ২০২১’ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তনিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২০ বাস্তবায়নের জন্য শ্রম অধিদপ্তরের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কল-কারখানা চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিতকরতে হবে। মহান মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। এই ঐতিহাসিক দিনে তিনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সকল মেহনতি মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। ১৮৮৬ সালের আমেরিকার শিকাগো শহরে রক্তাক্ত আন্দোলনে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মহুতি দেওয়া বীর শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। মে দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষ, মুজিব বর্ষে গড়বো দেশ’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল’ গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক যেকোন খাতে নিয়োজিত কোন শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমকল্যাণ নিশ্চিতকরণে ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’ ও ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা, ২০১৩’ এবং ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, ২০১১’ প্রণয়ন করেছি। পাশাপাশি, মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার স¤প্রসারণ ও জোরদারকরণে আমরা শ্রম পরিদপ্তরকে স¤প্রতি অধিদপ্তরে রুপান্তরিত করেছি। আমাদের সরকার সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এতে এক কোটির বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশি-বিদেশি সকল বিনিয়োগকারী যত্রতত্র শিল্প স্থাপন না করে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী শ্রমিককের জন্য শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ‘শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। পরিত্যক্ত কল-কারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। মুজিববর্ষে মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রণিত হয়ে করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের অগ্রযাত্রায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই ভূমিকা রাখি- মহান মে দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্বের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লহ। প্রধানমন্ত্রী মহান মে দিবস উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!