হিন্দুদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর-মন্দির পুনর্নির্মাণের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

বৈশ্বিক মহামারী মরণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনায় বাংলাদেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। আগের হিসাব যোগ করে গরিব মানুষের এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটির বেশি। আজ (২৩ অক্টোবর) শনিবার ইসলামী আন্দোলনের সাংবাদিক সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে দেশের একটি সংকটময় মুহূর্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়া সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম রাহিমাহুল্লাহসহ দেশপ্রেমিক প্রয়াত সকল উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। আজকে ব্যথিত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে, তা আমাদের প্রত্যাশা ছিলো না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলিমরা এই ভূখণ্ডে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। একই রাস্তায়, একই মহল্লায় মসজিদ আর মন্দির বছরের পর বছর অবস্থান করছে। মানুষ যার যার ধর্ম পালন করছে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো বিবাদ হলেও এই বছরের মতো ব্যাপক বিবাদ স্মরণকালে ঘটে নাই। কুমিল্লার একটি মন্দিরে পবিত্র কুরআন পাওয়াকে কেন্দ্র করে এবং ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাসকে ইস্যু করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে সব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দ্রুত বিচার চাই।

সাম্প্রতিক ঘটনায় কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ- ১. এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশের সাধারণ চরিত্র না। বাঙ্গালীর হাজার বছরের ইতিহাস এবং মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা এ ধরণের ঘটনাকে সমর্থন করে না। এটা ইতিহাস বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। ২. ঘটনার সূত্রপাত থেকে পরবর্তী প্রত্যেকটি ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতার ছাপ অতি স্পষ্ট। ৫০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে এ ধরণের ব্যর্থতা কল্পনাতীত। আমরা মনে করি, জন প্রশাসনে অতিমাত্রায় রাজনীতি প্রবেশের কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় এক ধরণের অদক্ষতা তৈরি হয়েছে। যার খেসারত এসব ঘটনা। ৩. কুমিল্লার ঘটনার পরে জনরোষ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সেই রোষে মানুষ বিক্ষোভ করবে তাও স্বাভাবিক। বেসামরিক বাহিনীগুলোকে এই ধরণের গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষিত করার কথা। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি, ৫০ বছরের স্বাধীন একটি দেশের বেসামরিক বাহিনী গণবিক্ষোভ দমনে গুলি করার মতো চরম সিদ্ধান্ত সহজেই নিয়ে নিচ্ছে। যার প্রতিফলন নিকট অতিতে ভোলায়, হাটহাজরীতে ও বি-বাড়িয়ায় দেখা গেছে। চাঁদপুরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একই রকমভাবে চরমপন্থা অবলম্বন করে বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে অন্তত পাঁচজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর অল্পতেই এমন চরমপন্থা গ্রহণ করার প্রবণতা জন স্বাধীনতা, নাগরিক বোধ ও সভ্যতার জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। ৪. কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া, সরকারী দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজ যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের সব ধরণের নীতি-নৈতিকতা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের এই ধরণের আগবাড়ানো প্রতিক্রিয়ালশীলতায় এই ঘটনার অন্তরালে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নোংরা কৌশলের আভাস পাওয়া যায়। ৫. কুমিল্লার ঘটনার পরে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মিডিয়া, রাজনৈতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজ যেভাবে ঘটনাকে কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছে, তা হতাশাজনক। দেশের ইতিহাস, বাঙ্গালীর চরিত্র ও ধর্মপ্রবণতা নিয়ে তাদের এমনতর ভুল ব্যাখ্যা হয়তো মূর্খতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কুমিল্লার ঘটনার যে ব্যাপ্তি তা নজীরবিহিন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়শই কুচক্রিমহল সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে অবমাননা করে এক ধরণের উত্তেজনা তৈরি করে ঘোলা পানিতে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, কুচক্রী মহলের এমন সুযোগ দেশের ক্ষমতাসীনরাই তৈরি করে দিয়েছে। কারণসমূহ- ১. এই ধরণের ঘটনার কখনোই সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় না। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অনেক কথা হয়, আশ্বাসবাণী শোনানো হয় কিন্তু বিচার হয় না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই অপশক্তিগুলোকে বারংবার ধর্ম অবমাননা করে উত্তেজনা তৈরির কৌশল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। ২. বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা করার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন নাই। ফলে যে ধর্মের অবমাননা করা হয় সেই ধর্মের অনুসারীরা এক ধরণের অসহায় বোধ করে। সেই অসহায় বোধ থেকেই তারা তৎক্ষণাৎ বিক্ষোভ দেখানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে সহিংস বিক্ষোভ প্রদর্শনে উৎসাহিত হয়। ৩. ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রীরা প্রায় নিয়মিত বিরতিতে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকেন। সাম্প্রতিক একজন অপরিণামদর্শী প্রতিমন্ত্রীর বালখিল্যতা জাতি দেখেছে। অপরিপক্ক সেই প্রতিমন্ত্রী যেভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাতে জন-ক্ষোভ আরো বেড়েছে। ৪. দেশে যখন একদলীয় শাসন চলে, সরকার যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে রাখে তখন অনিয়ন্ত্রিত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কুমিল্লা ও দেশব্যাপী তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। ৫. রাষ্ট্রের সরকার যখন স্বৈরাচারী ও শক্তি নির্ভর হয় তখন যেকোনো সামাজিক সমস্যার সমাধানে জনতার মাঝেও শক্তি নির্ভর পন্থার প্রাবল্য দেখা দেয়। সাম্প্রতিক ঘটনাতেও তাই দেখা গেছে।

এই বাস্তবতায় আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব করতে চাই। ১. কুমিল্লার ঘটনা ও তৎপরবর্তী ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি করতে হবে। এখানে কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা, বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও মূর্তি ভাঙ্গা, রংপুরে আগুন দেয়া এবং চাঁদপুরে বিক্ষোভে গুলি করে হত্যা করার বিষয়টি পুঙ্খানু-পুঙ্খানু তদন্ত করতে হবে এবং সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জনসন্মুখে প্রকাশ করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। ২. ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে। সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে কোন ধরণের ধর্ম অবমাননার ঘটনা ঘটলে জনতা আর সহিংস হয়ে উঠবে না। ৩. রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের অতি বাচাল প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মানুষের আবেগ-অনুভূতির জায়গায় আঘাত করে মন্তব্য করার প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অতি বাচাল তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ৪. দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরাতে বিরোধী দলগুলোর ওপরে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। আটক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ৫. শাসন ব্যবস্থায় জনতার মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে এবং সহনশীল, বহুদলীয়, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ৬. বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করে এবং তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বাহিনীগুলোকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। ৭. গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে গুলি করার মতো চরমপন্থা অবলম্বন করার প্রবণতা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। ৮. ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও সংখ্যালঘুদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী সরকারীভাবে নির্মাণ করে দিতে হবে এবং চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারসহ ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তি ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৯. দেশের একশ্রেণীর মিডিয়া, রাজনৈতিক সংগঠন ও তথাকথিত সুশীল সমাজ এই ধরণের ঘটনায় যেভাবে ধর্মকে কেন্দ্র করে একচোখা বয়ান দাড় করায়, তা বন্ধ করতে হবে। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস ও মনস্তত্ত্ব বিরোধী তাদের এই ধরণের বয়ান নির্মাণের পেছনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। ১০. প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দিতে হবে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনায় বাংলাদেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। আগের হিসাব যোগ করে গরিব মানুষের এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটির বেশি। অন্যদিকে ক্যাবের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬.৮৮%। গত ৩ বছরের ভেতর এটি সর্বোচ্চ। আর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মতে, গত একমাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯.৬৪%। একদিকে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের এই সীমাহীন বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। নিত্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের প্রধান কাজগুলোর একটি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলে, সরকার এই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

এখানে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ- ১. পণ্যের প্রাক উৎপাদন ধাপসমূহ এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে একদল মধ্যস্বত্ত্বভোগী রয়েছে। যারা কোন ধরণের মূল্য সংযোজন না করেই কেবল হাত বদল করার মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়ায়। ফলে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা জানি, এই মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণীর প্রায় পুরোটাই রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই দলীয় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের তুলে দিতে হবে। এবং উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝে পণ্যের দামের পার্থক্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে। ২. বাইরে থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করা হয়। এই কারসাজি বন্ধে টিসিবিকে আধুনিকায়ন ও দক্ষ করে তুলতে হবে। কাস্টমস ও শুল্ক বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ৩. দেশের নীতি নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের আধিক্য কমাতে হবে। কারণ কল্যাণ রাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক মুনাফা বিপরীতমুখী। একই ব্যক্তি উভয়টার সিদ্ধান্ত নিতে গেলে জনকল্যাণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৪. পরিবহন খাতে মাসে ৩০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। যার প্রভাব গিয়ে সরাসরি ভোক্তার ওপরে পরে। সেজন্য দব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচন কমিশন। একটি শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নির্বাচন কমিশন দেশের সংবিধান রক্ষা ও জনতার সরকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। আর আমরা বাংলাদেশে দেখলাম, এই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেই ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন করা হয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কতটা নির্মমভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি ইসি ও তাদের নিয়োগকর্তারা যে ইতিহাসের কালো স্থানেই থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য।

বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ প্রায়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ করা হবে। সার্চ কমিটির বাছাই করা ইসি যে কত জঘন্য হতে পারে তার নজীর তো এখনো চলমান। আসলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এসব সার্চ কমিটি আর আইন কোনটাই ফল দেবে না। সেজন্য আসন্ন ইসি গঠনে আমরা আহবান জানাচ্ছি; সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সার্বজনীন ইসি গঠন করুন। অথবা প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলো থেকে একজন করে নিয়ে একটি সর্বদলীয় ইসি গঠন করুন। অন্যথায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অবস্থার প্রেক্ষিতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলবে, তারপরেও জনতার ভোট নিয়ে আর কোন ছলচাতুরী করতে দেয়া হবে না।

দলীয় কোন সরকারের অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো এদেশে গড়ে ওঠে নাই। তাই অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ। আমরা বলি, এখনো সময় আছে। আইন সংশোধন করে হলেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় দেশে আবারো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচন চলছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রথম দফার মতো এই দফাতেও দেশজুড়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু সরকারদলীয় স্থানীয় মাস্তানরা আগের দফার মতো এবারও মনোনয়ন ফর্ম জমাদানে বাঁধা, প্রার্থীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভয়-ভীতি দেখানোসহ নানা রকম মাস্তানি করেই যাচ্ছে। আমরা মনে করিয়ে দিচ্ছি, আমরাও এই মাটির সন্তান। এখানে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনে অংশ নেয়া আমাদের অধিকার। এই অধিকার বারংবার কেড়ে নিতে চাইলে পরিণতি ভালো হবে না।

নির্বাচন কমিশনকে বলবো, পাপের খাতা অনেক ভারি হয়েছে। শেষকালে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করে সেই পাপ খানিকটা মোচন করে যান। মামলা হলো অপরাধী সংশোধনের আইনি প্রক্রিয়া; কিন্তু বাংলাদেশে মামলা ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। চলতি ঘটনাকে কেন্দ্র করেও বহু মামলা হয়েছে এবং তাতে হাজার-হাজার বেনামী আসামী দেখানো হয়েছে। এরকম বেনামী আসামী করার মাধ্যমে মানুষকে হয়রানী করা হয় বলে আমরা অতিতে দেখেছি। এক্ষেত্রে পরিষ্কার বক্তব্য হলো, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন। কোন নিরীহ মানুষকে যাতে হয়রানী করা না হয়। এখানে প্রসঙ্গত দেশে বিভিন্ন কারাগারে শত শত ওলামায়ে কেরাম আটক অবস্থায় আছেন। মামলা মাথায় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার ওলামা। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রমাণ নাই, এমন ওলামা ও রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিন এবং মামলা প্রত্যাহার করুন। বাক স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক ও বিশ্বজনীন অধিকার। বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা হরণের জন্য তথ্য প্রযুক্তি আইনের যথেচ্ছা রাজনৈতিক ব্যবহার সর্ব-মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল করীম আকরাম এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের দায়িত্বশীল গিয়াস উদ্দিন পরশের বিরুদ্ধেও এ আইনে ভিত্তিহীন একটি মামলা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি জন সম্পৃক্ত শান্তিকামী সংগঠন। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান করতে চাই। পেশি শক্তি নির্ভর হঠকারি রাজনীতি আমরা করি না। আমরা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। সেই অনুভূতি থেকেই চলতি বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলো। আমরা আশা করবো, দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। যদি তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন এবং দেশের পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যেতেই থাকে, তাহলে জন মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠন হিসেবে ইসলামী আন্দোলন চুপ করে বসে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

কর্মসূচী : আগামী ২৭ অক্টোবর দেশের চলমান সংকট ও তা থেকে উত্তরনের লক্ষে দেশের সর্ব-মহলের শীর্ষস্থানীয় পীর-মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও সমাজকর্মীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা চাই সমস্যার সমাধান হোক শান্তিপূর্ণভাবে। পারস্পরিক সৌহার্দ ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুফল পাক। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হোক এই প্রত্যাশায় শেষ করছি। আপনাদের সবাইকে আবারো আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!