হেফাজতে থেকে পদত্যাগ করলেন মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে থেকে পদত্যাগ করেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়ার সাবেক মুহাদ্দিস মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী। এর আগে (১৩ এপ্রিল) মঙ্গলবার  জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমিরের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। আজ (২২ এপ্রিল) শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। নিম্নে পূর্ণাঙ্গ লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

সম্মানিত ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী সাংবাদিক ভাইয়েরা, সামাজিক ও নাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা, আসসালামু আলাইকুম আমি মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশব্যাপী চলমান অস্থিতিশীল অবস্থার প্রেক্ষিতে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমি দীর্ঘদিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুসিয়া ইসলামিয়ায় খেদমতে ছিলাম। কিছু মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে যড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে বিগত ০১/১২/২০২০ তারিখে জামিয়ার সকল দায় দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। আপনারা অবগত আছেন অত্র প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে আমাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানাে হয় এবং জামিয়ার সকল কার্যক্রম ও দায়িত্বের সাথে আমি কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নই এ ব্যাপারে বক্তব্য প্রদান করা হয়। এমনকি জামিয়াতে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

পূর্ব হতে যদিও আমি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে ও রাজবাড়িয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলাম কিন্তু ০১/১২/২০১০ তারিখের পর হতে আমাকে সকল দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর হতে এ পর্যন্ত জামিয়া বা হেফাজতে ইসলামের আভ্যন্তরীণ বা সার্বজনীন কোন সভা, সমাবেশ, মিছিল বা মাহফিল কোথাও আমাকে আমন্ত্রণ জানানাে হয়নি, এমনকি জামিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহের মাহফিলেও আমাকে আমন্ত্রণ জানানাে হয়নি। তাই আমি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মাদরাসাসমূহে ছাত্রদের তালিম তরবিয়্যত নিয়ে একান্তভাবে ব্যস্ত আছি। কোনভাবেই জামিয়া বা হেফাজতে ইসলামের কোনরকম কার্যক্রমের সাথে জড়িত নই।।

২৬ শে মার্চ ২০২১, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ভৱিতের সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীর রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আগমনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের ডাকে যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তা নজিরবিহীন, অমানবিক এবং দেশ ও জনগণের জান মালের যে ক্ষতি হয় তা কোনভাবেই ইসলাম সম্মত হতে পারেনা। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এসমস্ত কার্যক্রম হতে নিস্ক্রিয় থাকি এবং আমার স্বাবধানে পরিচালিত সমস্ত মাদরাসা সমহের সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের এসমস্ত দেশ ও ইসলাম বিরােধী কাজে যােগদান না করতে বাধ্য করি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৬/০৩/২০১১ তারিখে রেল ষ্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতি করা এবং ২৭, ২৮ মার্চ ২০১১ মধ্যে হতাল চলাকালে যে সমস্ত ভাংচুর, অসিংযোগসহ জান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় তাতে আমি বা আমার মাদরাসা কোন ছাত্র কোনভাবেই অংশগ্রহণ করে নাই। এমতাস্থায় কে বা কাহারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার নাম যুক্ত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে যা নিতাই প্রতিহিংসামূলক মিথ্যাচার এবং সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে এর কোনরূপ সম্পর্ক নেই।

অতএব আমি স্পষ্ট ভাষায় আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আমি হেফাজতে ইসলামের চলমান কোন কার্যক্রমের সাথে জড়িত নই, তাদের সকল প্রকার নাশকতামূলক কার্যক্রমকে শরঈভাবে অবৈধ মনে করি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতে ইসলামের সকল কার্যক্রম ও জাতীয় এবং জেলা কমিটির সকল পদসমূহ হতে পদত্যাগ করছি। এবং যাদের প্ররােচনায় দেশ ও জনগণের জান, মাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে বিনীতভাবে অনুরােধ করছি।

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!