বিয়ে: মনের মিল যেখানে অত্যাবশ্যক
খোদায়ী নেজামের একটি অতিসুন্দর দিক হচ্ছে বিয়ে। মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীরই বিয়ে-সংসারের কাহিনী নেই। মানব প্রজন্মের ধারা অব্যাহত রাখতে বৈধ পন্থাই বিয়ে। মানুষের জীবনে সুখের পূর্ণতা এনে দিতে এই বিয়ের বিকল্প নেই। বিয়েকে স্বর্গ সুখের আংশিক ধারনাও বলা যায়। আর এটা তখনই সম্ভব হয় যখন দুটি মনের মিলন ঘটে। শুধু দুটি স্বত্তাকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এলেই সে সুখ সম্ভব নয়। মনের মিলনই সুখভোগের পূর্বশর্ত।
কতো বিয়ে গড়ার আগেই ভেঙ্গে যায়। কতো বিয়ে গড়েও টেকেনা। কতো বিয়ে ঠিকে আছে কিন্তু মাকড়শার জালের মতো পতনোন্মুখ। কতো বিয়ে বিষের চেয়ে অসহ্যের। পাথরের চেয়েও ভারী। লোহার চেয়েও কঠিন। এসবের মূলে তো কারণ একটাই, দুটি স্বত্তার মিলন ঘটেছে কাগজেকলমে, কিন্তু দুটি মনের মাঝে দূরত্ব রয়ে গেছে শত সহস্র ক্রোড়ের।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বর কিংবা বর পক্ষের চাহিদা-রুচিটাই প্রাধান্য পায়। কনে এখানে গৌণ। তার কোনো চাহিদা থাকতে নেই। তার কোনো রুচি থাকা অনুচিত। এভাবেই একটা সমাজে কনের জীবনে চাপিয়ে দেওয়া হয় জগদ্দল পাথরের বোঝা। এ বোঝা সে বয়েও বেড়াতে পারেনা, সয়েও যেতে পারেনা। মুখ ফুটে সেই ‘না পারাটা’ও কাউকে শেয়ার করতে পারে না। সাংসারিক জীবনটা সেখানে অসহ্য, কঠিন আর ভারী হওয়াটাই তো অনিবার্য্য ।
এ সমাজে বর পক্ষের চাওয়া চাহিদার শেষ নেই,কিন্তু কনেকে তার যোগ্য জীবন সঙ্গী বাচাইয়ের সুযোগটা পর্যন্ত দেয়না, দিতে চায়না। ফলে বিয়ের দিন থেকেই চোখের অশ্রু সাথী হয় একটা মেয়ের জীবনে। অনেক মেয়ে অশ্রুসজল নয়নেই স্বামীর আজীবন দাসত্ব স্বীকার করে। স্বামীর চাহিদা পূরণে নিজ পেটে সন্তানও ধারন করে। এভাবেই নিজের অনিচ্ছা-অনিহা স্বত্ত্বেও তিলেতিলে নিজেকে শেষ করে দেয় এক একটা মেয়ে।
ইসলাম এভাবে কাউকে কারো জীবনে চাপিয়ে দেবার অনুমোদন দেয়না। ছেলে মেয়ে উভয়ের পছন্দ-অপছন্দকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। একারণে ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয়, বাস্তবতা ও বিজ্ঞানসম্মত জীবন ব্যবস্থার নাম।
আমাদের মেয়ে কিংবা বোনকে কারো কাছে পাত্রস্থ করার আগে তার চাহিদাটাও জেনে নেওয়া দরকার। প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে কিংবা বোন নিজের মতামত জানাবার অধিকার রাখে। তার সেই অধিকার হরণ করার বৈধতা কারো নেই। আজ তার অধিকার সমুন্নত রাখলে ভবিষ্যত জীবনে শুধু সেই সুখি হবেনা,তার আপনজনেরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আর তাকে অধিকারবঞ্চিত করলে সেই শুধু অসুখী হবেনা, বরং তার অসুখের বিষবাষ্প আপনজনকেও নীলাভ করে তুলবে।