আমাদের উস্তাদ মাওলানা রশীদ আহমদ রাহি.

আমরা ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে আছি। কুরআন-হাদীস, সিয়াসত, সাহিত্য আর দর্শনের নানান দিক নিয়ে আলাপ হচ্ছে। এর ভিতরে কতো মানুষ দোকানে আসে আর আসলে ত চলেও যায়। কিন্তু আমাদের উঠতে ইচ্ছা করে না। কোনোদিনই করে নাই। রাত যখন মধ্যরাত শব্দের দিকে যাচ্ছে, অনিচ্ছা নিয়া আমরা বের হয়ে আসতাম উস্তাদ আল্লামা রশীদ আহমদ রাহি.-এর অফিস থেকে।
যেকোনো বিষয়ে সহজ এবং সাবলীল করে বুঝিয়ে দিতে পারতেন উস্তাদ রাহি. । কেউ কাছে গেলে বলতেন কুরআনের জ্ঞান নেয়ার কথা। মানুষকে কুরআনের দিকে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিতেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জায়গা হচ্ছে কুরআন, কিন্তু মুসলিমরা মতপার্থক্যের জায়গায় থেকেও কুরআনের দিকে আসলে বিজয় এবং সফলতা পেয়ে যেতো। ফিরতেছে না দেখে হাহাকার করে গেলেন মৃত্যু পর্যন্ত।
আজ থেকে এক বছর আগে ৩০ জুলাই, সকালে যখন বাবা আমারে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললেন উস্তাদ রাহি.-এর মৃত্যুর কথা। আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম আর নিজের মাঝে থাকলাম না। বাসা থেকে বের হয়ে যখন উস্তাদের বাসার দিকে যাচ্ছি, যখন উনার জানাজার দিকে যাচ্ছি এবং যখন কবরের রেখে আসলাম আমাদের যেন আর কিচ্ছু থাকলো না অনুভব হলো। মনে হলো একটা জাহাজ মাঝপথে রেখে হঠাৎ নাই হয়ে গেছে। উস্তাদ রাহি. ইলমের জাহাজ ছিলেন।
আমরা যখন কোনো পথ পাচ্ছিলাম না, আমাদের পথ দেখিয়ে দিলেন। বলতেন জ্ঞান অর্জন করো, জাদিদ বিজ্ঞান শেখো। ইলিমের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা বাড়িয়ে দিলেন। উস্তাদ রাহি.-এর কাছে গেলে যেন তৃষ্ণা বেড়ে যেতো এবং আমরা প্রশ্ন করতাম যেকোনো কিছু নিয়ে। কখনোই বিরক্ত হতেন না। নানান বিষয়ে উনার সাথে অসংখ্যবার দ্বিমতও করেছি । উনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য হলে অন্যের যুক্তি গ্রহণ করতেন। কখনোই সামান্য করেও কপাল কুঞ্চিত হতো না। কোনো বিষয়ে যদি না জানতেন সরলভাবেই বলে দিতেন, আমি ত জানি না এটা, জেনে বলবো।
উস্তাদ রশীদ আহমদ রাহি. ক্লাসে ছাত্রদের কখনো তুমি বা তুই করে সম্বোধন করতেন না। উনার তালিমের পদ্ধতিও ছিলো দারুণ। মিশকাতের ক্লাসে একদিন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন করলেন। ছাত্ররা প্রচলিত একটা জবাব দিলে উনি সরাসরি এটাকে খারিজ করেন নাই। উনার বক্তব্যের পক্ষে একটা হাদীস বর্ণনা করেন। এরপর বলেন আপনাদের বক্তব্যের পক্ষে কী কুরআন বা হাদীসের কোনো কথা আছে?
উস্তাদ রাহি. বলতেন, আল্লাহর প্রতিনিধি হও, আর হুক্কুল ইবাদের দিকে খেয়াল রাখো। আখেরাত সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহ পরম করুণাময় এবং অতিশয় দয়ালু। তিনি ক্ষমাশীল। এবং নিশ্চয়ই তিনি তাঁর প্রতিনিধিকে ভালোবাসেন।
দোয়া করি আল্লাহ আমাদের উস্তাদ রাহি.-কে রহমতের চাদরে ঢেকে রাখুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমীন
— সাইয়্যিদ মুজাদ্দিদ