হেফাজত কর্তৃপক্ষের প্রতি আমার ১০ দফা আবেদন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমাদের প্রিয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সম্মানিত দায়িত্বশীলগণের উদ্দেশ্যে ১০টি আবেদন রাখতে চাই। যদি কোন দায়িত্বশীল এসব বিষয়ে সামান্য দৃষ্টি দেন তাহলে আশাকরি হেফাজত এই সময়ে আরো বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সকল প্রকার বিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারবে। রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে হেফাজতের চেয়ে শক্তিশালী কোন সংগঠন আপাতত: বর্তমান নেই। তাই দেশের মানুষের মধ্যে হারিয়ে ফেলা সাহস ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে নীচের পদক্ষেপগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে বিশেষভাবে নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন রাখছি।

১ম প্রস্তাব : ঢাকা মহানগরী কমিটি গঠনের পর থেকেই আমার কাছে মনে হয়েছে, হেফাজত যেন নেতৃত্ব শুন্যতায় ভোগছে। প্রস্তাব করছি, ঢাকা মহানগরীর আমীর হিসেবে একজন বয়োজ্যেষ্ট মুরুব্বি রাখা হোক। যিনি পরীক্ষিত নেতা এবং রাহবার। আর তিনি হতে পারেন আল্লামা আব্দুল হামীদ, পীর সাহেব মধুপুর। বয়সে তিনি প্রবীণ হলেও সাহস, দায়িত্বশীলতা, গ্রহনযোগ্যতার দিক দিয়ে তিনি অনেক উপরে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব সাহেবকে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে রাখা যেতে পারে।

২য় প্রস্তাব : হেফাজতের মূল কমিটিতে দেশের কওমী ঘরানার বাইরেও যেসব হকপন্থী দল ও খানকাহ আছে, তাদেরকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে কমিটিতে সংযুক্ত করা হোক। তার মধ্যে আমার প্রস্তাব হলো, হেফাজতের মূল কমিটিতে চরমোনাই দরবার, শর্ষিণা দরবার, ফুলতলি দরবার, জৈনপুরি দরবার (এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব), ফুরফুরা দরবার, নেছারাবাদ দরবার শরীফের কমপক্ষে একজন করে দায়িত্বশীলকে হেফাজতের মূল কমিটিতে রাখা হোক। হেফাজতের পক্ষ থেকে তাদেরকে অংশগ্রহনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রন জানানো হোক। মহানগরী কমিটিতেও তাদেরকে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত করা হোক।

৩য় প্রস্তাব : ইসলামী ভাবাপ্পন্ন সাধারণ শিক্ষিতদের মধ্য থেকে যারা দ্বীনকে ভালোবাসে, আলেম-উলামাদের সম্মান করে, দেশে ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে পছন্দ করে, এমনসব মিডিয়াকর্মী, সাবেক বিচারপতি, সামরিক কর্মকতা, কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক উচ্চস্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সুশীল ব্যক্তিত্ব, লেখক, গবেষকদের কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তার জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।

৪র্থ প্রস্তাব : সম্প্রতি যে ঝড় হেফাজতের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে, সেই ঝড়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের সকলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হোক। এবং আলেমদের একটি বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদেরকে শহীদ ঘোষণা দিয়ে তাদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসির প্রতি আহবান জানানো হোক।

৫ম প্রস্তাব : যারা বিগত কয়েকদিনের আন্দোলনে মারাত্মক আহত হয়েছে তাদের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করা হোক। তাদেরকেও জনগণের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দানের জন্য নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হোক। সরকার কোন সহযোগিতা করবে না, সেটা সকলের কাছেই পরিস্কার। সুতরাং সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই না।

৬ষ্ঠ প্রস্তাব : ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। এর মাধ্যমে সারাদেশে হেফাজতের কার্যক্রম যাতে সুন্দরমতো সাংগঠনিকভাবে চলে, সংগঠন যেন কোন অবস্থাতেই কোন ব্যক্তির পকেটস্থ হয়ে না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হোক।

৭ম প্রস্তাব : সারাদেশের সকল আবাসিক হোটেল, বার, ক্লাব ও রিসোর্টগুলোতে কী কী সমাজ বিরোধী কাজ হয় সেগুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে দেশের তৌহিদী জনতার প্রতি হেফাজতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হোক।

৮ম প্রস্তাব : সারাদেশের সকল সেক্টরে যেখানেই অন্যায়, জুলুম, ধর্ম, বর্ণ. অর্থনৈতিক ও লিঙ্গ বৈষম্য চোখে পড়বে সেখানেই হেফাজতের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের জন্য জাতীয়ভাবে দিক নির্দেশনা জারি করা হোক। শুধু ইসলামী ইস্যুই নয়, ইনসাফ, মানবিকতা ইত্যাদি বিষয় দেখে কর্মসূচী প্রণয়নের জন্য বিশেষভাবে কোন উপ-কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

৯ম প্রস্তাব : দেশব্যাপি বিচারহীনতার যে ভয়াবহ থাবা ছড়িয়ে পড়েছে তার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। কোন অন্যায় দেখলে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না, নানা ট্যাগ লাগিয়ে প্রতিবাদকারিদের হেনস্থা করা হয়, দুর্বলরা সুবিচার পায় না। এসব ব্যাপারে হেফাজতের পক্ষ থেকে করণীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হোক।

১০ম প্রস্তাব : হেফাজতের ভেতর থেকেও কেউ অন্যায় করলে, সে যেন নিজেকে আইনের উর্ধ্বে মনে না করে, সেই সংস্কৃতিটা চালু করা হোক। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়েও দ্বীন বড় এই নীতিই হোক আমাদের সকল কাজের উৎস।

আল্লাহ তায়ালা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্বীনি কার্যক্রম আরো বেগবান করার তৌফিক দান করুন। সংগঠনটির সকল স্তরের নেতৃবৃন্দের মধ্যে দায়িত্বশীলতা, আমানতদারি, দেশপ্রেম, উম্মাহ প্রেম বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।

লেখক : জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট-বিআইএম

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পর্কিত পোস্ট

Back to top button
error: Content is protected !!